Coroanvirus

লকডাউনের জেরে রোজগারে তালা পুরোহিতদেরও

সামাজিক ব্যবধান-বিধির জেরে অনেকে বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজোতেও পুরোহিত ডাকছেন না। বৈশাখে বহু বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে। 

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০১:২৬
Share:

চলছে লকডাউন, নববর্ষে দেখা যাবে না এই পরিচিত ছবি। ফাইল চিত্র

‘‘ঠাকুরমশাই, দোকানের পুজোটা কিন্তু আপনাকেই করতে হবে।’’

Advertisement

গত বছরও চৈত্রের শেষে এ হেন আবদারের চোটে কার্যত ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ পুরোহিত। খুব পরিচিত কেউ হলে তাঁকে বলছিলেন, ‘‘এ বারটা মাফ কর। বয়স হয়েছে তো! তিনটের বেশি পুজো করতে পারব না।’’

নববর্ষের হালখাতা পুজোর জন্য পুরোহিত নিয়ে টানাটানির এই ছবি বাঙালির কাছে বহু পুরনো। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ বার বদলেছে সেই ছবিও। ফোন না-ধরা পুরোহিতও এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কত ক্ষণে ফোনটা বাজবে আর গণেশ বা লক্ষ্মীপুজোর বরাত আসবে।

Advertisement

শুধু নববর্ষের হালখাতা পুজোই নয়, চৈত্র থেকে টানা কয়েক মাস বিভিন্ন পুজো এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে এখন আর তাঁরা ডাক পাবেন কি না, তা নিয়েই চিন্তায় দিন কাটছে অধিকাংশ পুরোহিতের। এমনই এক পুরোহিতের কথায়, ‘‘পুজো করেই কিছু রোজগার হত। সামাজিক ব্যবধান-বিধির জেরে এখন তো সব পুজো-অনুষ্ঠানও বন্ধ।’’ লকডাউনের জেরে পুরোহিতদের রোজগারে যে টান পড়েছে, সে কথা মানছে রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টও। সংগঠনের সম্পাদক শ্রীধর মিশ্র বললেন, ‘‘কিছু পুরোহিতের খুবই অভাবে দিন কাটছে। বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।’’

রাজ্যের ওই সংগঠনের প্রায় এক লক্ষ ৮৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। যাঁদের অধিকাংশই পেশায় পুরোহিত। শ্রীধর জানান, তাঁদের সংগঠনের সদস্য হিসেবে কলকাতায় তিন-চার হাজার, হাওড়ায় প্রায় ১৯ হাজার এবং দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার পুরোহিত রয়েছেন। বিভিন্ন মন্দির ও বনেদি বাড়িতে নিত্যপুজোর পাশাপাশি সারা বছরই বিভিন্ন পূজার্চনায় পৌরোহিত্য করেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের জেরে সব কিছুতেই কার্যত ‘তালা’ পড়েছে বলে দাবি পুরোহিতদের। হাওড়ার ডোমজুড়ে ৫০০ জন পুরোহিতের হাতে শনিবার চাল-ডাল তুলে দেওয়া হয়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সর্বত্রই সামাজিক ব্যবধান-বিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। সেই মতো পাড়ার মন্দিরেও এখন ভক্ত সমাগম বন্ধ। পুরোহিতদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখান থেকেই। মন্দিরগুলিতে পুজো করার জন্য মাসিক সামান্য টাকা মিলত। পাশাপাশি কিছু ভক্ত প্রণামীও দিতেন। সব মিলিয়ে তাঁদের একটা নির্দিষ্ট আয় ছিল। সেখানে কোনও মতে এখন শুধু নিত্যপুজো সারতে হচ্ছে। লকডাউনের জেরে এ বছর বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পুজোও তেমন ভাবে হয়নি অনেক জায়গাতেই। আবার নববর্ষের দিন তিন-চারটি দোকানে গণেশ-লক্ষ্মী পুজোর বরাতও আসেনি। আর সামাজিক ব্যবধান-বিধির জেরে অনেকে বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজোতেও পুরোহিত ডাকছেন না। বৈশাখে বহু বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে।

এক পুরোহিতের কথায়, ‘‘পুজো করতে গেলে প্রণামীর পাশাপাশি চাল, আনাজ, কাপড়, গামছাও মিলত। সে সব থেকেও কিছু অর্থ উপার্জন হত। এখন তো পুজোই বন্ধ। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেও মোটামুটি ভাল টাকা দক্ষিণা মিলত। সেটাও এখন অনিশ্চিত।’’ পুজোর উপচার ঠিকমতো না মেলাটাও একটা সমস্যা, জানালেন পুরোহিত শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘গেলাম আর কিছু মন্ত্র পড়ে চলে এলাম, তা তো হয় না। পুজোর জন্য কিছু সামগ্রী লাগে। সেই সামগ্রীরও অভাব রয়েছে। কয়েক দিন আগে তো ফুলটাও পাওয়া যাচ্ছিল না।’’

তিনি আরও জানান, পরিবর্তিত ব্যবস্থায় ফুল পাওয়া না গেলেও চাল, জল দিয়ে পুজোর বিধান রয়েছে। কারণ, নিত্যপুজো বন্ধ করা যায় না। শম্ভুনাথবাবু বলেন, ‘‘নিত্যপুজোর জন্য তুলসী পাতা পাওয়া গেলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে বেলপাতা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। আরও অনেক জিনিসই মিলছে না। এ সব কারণেও পুরোহিতদের সমস্যা হচ্ছে। তবে নিজেকে বাঁচাতে সরকারের নির্দেশ সকলকেই মানতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন