Coronavirus

কন্টেনমেন্ট জোনেও চলছে আড্ডা-তাস!

লকডাউনের নিয়ম উড়িয়ে সকাল-সন্ধ্যা খোলা বাজারে থিকথিক করছে ভিড়। বন্ধ নেই মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে অকারণে ঘোরাঘুরিও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫০
Share:

বেপরোয়া: (বাঁ দিকে)এলাকায় ধরা পড়েছে করোনা সংক্রমণ। তবু বিধি মানতে আপত্তি করছেন এই ব্যক্তির মতো অনেকেই। বুধবার, উত্তর কলকাতার অভয় মিত্র স্ট্রিটে। অবাধ: কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষিত এলাকাতেও আটকানো যায়নি মানুষের যাতায়াত। বুধবার, (ডান দিকে উপরে) পার্ক সার্কাসের গোরাচাঁদ রোড এবং (ডান দিকে নীচে) উত্তর কলকাতার ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে। —নিজস্ব চিত্র

হাওড়ার অবস্থা দিন কয়েক আগেও কালঘাম ছুটিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। অনেকের দাবি, গত কয়েক দিনে হাওড়ার পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ায়। কিন্তু কলকাতার অবস্থা কী? বুধবার শহরের ২২৭টি কন্টেনমেন্ট জ়োনের বেশ কয়েকটি ঘুরে দেখা গেল, কড়া বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে সব! যা প্রশ্ন তুলে দেয়, দিন কয়েক আগে হাওড়া যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল, এখন কলকাতাও কি দাঁড়িয়ে সেই জায়গায়?

Advertisement

হাওড়ায় দেখা গিয়েছিল, লাগাতার প্রচার সত্ত্বেও খোলা থাকছে দোকান। লকডাউনের নিয়ম উড়িয়ে সকাল-সন্ধ্যা খোলা বাজারে থিকথিক করছে ভিড়। বন্ধ নেই মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে অকারণে ঘোরাঘুরিও! কলকাতাতেও কারণে-অকারণে এখনও রাস্তায় বেরোনো বন্ধ হয়নি। প্রবল ভিড় বাজারগুলিতে। বন্ধ হয়নি রাস্তার আড্ডাও। বহু কন্টেনমেন্ট জ়োনে আবার পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে রাখার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই। যেখানে গার্ডরেল রয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতি যেন ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’!

২২৭টি জ়োনের মধ্যেই রয়েছে অভয় মিত্র স্ট্রিট। এই রাস্তা সংলগ্ন পার্কে উত্তর কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজো হয়। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তা ঘিরে দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। সকলেরই অবাধ যাতায়াত। সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই পার্কের পাশের এক বাড়িতে করোনা-আক্রান্তের হদিস মেলায় সেই বাড়ি স্রেফ গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। কাছেই গল্পে ব্যস্ত এক স্থানীয় বাসিন্দা বললেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট মানি না। পাড়ার বদনাম করতে অনেকে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে।’’ এর পরে মুখের মাস্ক নামিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘কিসের করোনা? এই তো মাস্ক নামিয়ে বিড়ি খাব। কে কী করবে?’’ দেখা গেল, পুলিশ-প্রশাসনের নাম করে গালিগালাজ করতেও পিছপা হন না ওই ব্যক্তি।

Advertisement

একই অবস্থা কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায় থাকা বেলগাছিয়ার ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে। সেখানকার বাজারের কাছেই একটি বাড়িতে করোনা-আক্রান্তের হদিস মিলেছে। কিন্তু রাস্তা বা বাড়ি, কোনওটাই ঘিরে দেওয়া হয়নি। এখনও আগের মতোই বাজার বসছে বাড়ির পাশে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘করোনা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখানে। বাজারে কেমন ভিড় হচ্ছে, না দেখলে বুঝবেন না।’’ একই অবস্থা বেলগাছিয়ার লাল ময়দান, ক্যানাল ইস্ট ও ক্যানাল ওয়েস্ট রোড, নারকেলডাঙা, সিআইটি রোড, কাশীপুর, বেনিয়াপুকুরের গোরাচাঁদ রোডের মতো কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলির। কন্টেনমেন্ট জ়োন হওয়ার চিহ্ন নেই শ্যামপুকুর স্ট্রিটেও। সেখানকার একটি রেস্তরাঁর পাশের বাড়ির বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় স্রেফ ওই বাড়ির সামনের ২০ ফুট লম্বা গলি গার্ডরেল এবং বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

ছোঁয়াচ বাঁচানোর চেষ্টা উড়িয়ে দেদার তাস খেলতে ও আড্ডা দিতে দেখা গেল দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোড, মহানির্বাণ রোডের মতো কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতেও। কালীঘাট রোডে আবার কোনও গার্ডরেলই চোখে পড়েনি। পাম অ্যাভিনিউয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে আবার কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে গার্ডরেল পাতা হয়েছিল। তবে এলাকার লোকজন নিজেরাই দু’টি গার্ডরেলের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে রাস্তা করে নিয়েছেন।

কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বললেন, ‘‘কোনও ভাবেই এ সব বরদাস্ত করা যায় না। আমরা যতটা সম্ভব প্রচার চালিয়ে, মানুষের পাশে থেকে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কেন সব এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োনের নিয়ম মানা হচ্ছে না, সেটা পুলিশ বলতে পারবে।’’ কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বললেন, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোনও ভাবেই কন্টেনমেন্ট জ়োনের নিয়ম লঙ্ঘন করা যাবে না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে পরতে হবে পিপিই

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement