বাজার-চিত্র: লকডাউন উপেক্ষা করেই হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন পাইকারি বাজারে উপচে পড়েছে ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
লকডাউন শুরুর সময় থেকেই রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, রাজ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জোগানের কোনও সমস্যা নেই। বাজার প্রতিদিনই খোলা থাকবে। এমনকি স্থানীয় বাজারের বিক্রেতাদেরও পাইকারি বাজারে গিয়ে আনাজ-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও একটি বড় অংশের ক্রেতা প্রতিদিন বাজারে গিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যার জেরে আরও অনেক ক্রেতাই বঞ্চিত হচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা থেকে। সংক্রমণের আশঙ্কা ভুলে ঠেসাঠেসি, ধাক্কাধাক্কি করেই বাজার করছেন সবাই।
বৃহস্পতিবার কলকাতার বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল অনেকেই পাঁচ কিলো আলু, দু’-তিন কিলো পেঁয়াজ কিংবা বেশি পরিমাণে অন্য জিনিসপত্র কিনছেন। মানিকতলা বাজারের আনাজ ব্যবসায়ী রমেন মণ্ডলের কথায়, ‘‘বছরের অন্য সময়ে এই ধরনের ভিড় হয় না।’’ উত্তরের মানিকতলা, বাগমারি, কলেজ স্ট্রিট কিংবা দক্ষিণ কলকাতার লেক, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, পিকনিক গার্ডেনের বাজারেও একই ছবি দেখা যায়। বাজার করার হুড়োহুড়ি দেখে মনে হল করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা যেন ওই ক্রেতাদের মাথাতেই নেই। বহু জায়গাতেই পুলিশ পৌঁছে জমায়েত হাল্কা করে দেয়।
ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘সবাই ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে লকডাউন দীর্ঘদিন ধরে চললে বাজারে জিনিসপত্রের ঘাটতি হবে। আনাজের দামও ইতিমধ্যেই বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের এটাও ভেবে দেখতে হবে সবাই যেন কেনাকাটা করতে পারেন। পাইকারি বাজার থেকে লরি আসার সমস্যা রয়েছে ঠিকই। তবে সেই সমস্যা কেটে যাবে।’’
সামান্য হলেও বিপরীত ছবি দেখা গেল লেক মার্কেট, গড়িয়াহাটের মতো বাজারে। যেখানে ক্রেতারা স্বেচ্ছায় দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করেছেন। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে রাজ্য সরকারের সুফল বাংলার স্টলে দেখা গেল দূরত্ব বজায় রেখেই ক্রেতারা লাইন দিয়েছেন।
বালিগঞ্জে আনাজের সরকারি স্টলে দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দিয়েছেন ক্রেতারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার, বিশ্বনাথ বণিক
এ দিন বিকেলে পূর্ব কলকাতার বিধান শিশু উদ্যানের জৈব হাটেও ভিড় জমেছিল ক্রেতাদের। তবে বিরাট জায়গা হওয়ায় সকলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাজার করার সুযোগ পেয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার টোনা থেকে চাষিরা এসেছিলেন আনাজ, মাছ-সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে। উদ্যানের সম্পাদক গৌতম তালুকদার বলেন, ‘‘সরকারের নির্ধারিত দামেই আমাদের হাট চলে। জরুরি পরিস্থিতিতে এখানে আনাজ, মাছ-মাংস পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রাখা হবে। রবিবার সকালেও হাট বসবে।’’
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ইতিমধ্যেই পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, বাজারের মতো জায়গা যেখানে জমায়েত বেশি হয়, সেই সব জায়গায় ভাল করে জীবাণুনাশক দিয়ে সাফ করতে হবে। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবাশিস জানা ও মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় জানান, বাজার এলাকাগুলি ভাল করে জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
এ দিন হাওড়ার বকুলতলা বাজার ও অন্য জনবহুল এলাকায় জলে রাসায়নিক মিশিয়ে দমকলের মাধ্যমে রাস্তা জীবাণুমুক্ত করার কাজ হয়। সব কিছু বন্ধ থাকায় বর্তমানে সেখানে প্রতিদিন ৮৫০ মেট্রিক টনের বদলে উৎপন্ন হওয়া জঞ্জালের পরিমাণ ৫০০ টনে নেমে এসেছে বলে হাওড়া পুরসভা জানিয়েছে।