প্রকাশ্যে মদ্যপান, মহিলাদের কটূক্তি এবং শ্লীলতাহানির বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। সব ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করতে গেলে জুটেছে মারধর। কিন্তু তার পরেও যে এতে ছেদ পড়েনি, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত নিউ টাউন এবং বেলঘরিয়ার দু’টি পৃথক ঘটনায় ফের সেই প্রমাণ মিলল। দু’টি ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট দু’জন। পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছে পুলিশি নজরদারি নিয়েও। নিউ টাউনের ঘটনায় ধৃতের নাম অশোক সরকার। অন্যটিতে গ্রেফতার করা হয়েছে দেবাশিস চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক যুবককে।
নিউ টাউনের ঘটনাটি ঠিক কী? পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় নিউ টাউনের হাতিয়াড়ায় বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, বাড়ির কাছেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছিল অশোক ও তার কয়েক জন সঙ্গী। তিনি আসতেই কটূক্তি করে তারা। ওই মহিলা প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, এর পরেই তাঁর উপরে চড়াও হয় অশোক ও তার সঙ্গীরা। গোলমাল শুনে মহিলাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তাঁর বাবা ও পরিবারের কয়েক জন। তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, মহিলার শাড়িও ছিঁড়ে দেওয়া হয়।
ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই অশোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাতিয়াড়ার বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন, ইদানীং এমন ঘটনা বেড়েছে। রাত বাড়লেই শুরু হয়ে যায় প্রকাশ্যে মদ্যপান। পাশাপাশি, মহিলাদের উদ্দেশে কটূক্তি ও শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটছে। অনেকে ভয়ে অভিযোগ করতে সাহস পান না। যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা জানিয়েছেন, এমন ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
অন্য দিকে, রবিবার বিকেলে বেলঘরিয়ার যতীন দাস হাইস্কুলের কাছে ঘটে দ্বিতীয় ঘটনাটি। চিরঞ্জিৎ সোম নামে এক যুবক ও তাঁর বান্ধবী ওই স্কুলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। চিরঞ্জিৎ পেশায় সাংবাদিক। অভিযোগ, মাঝপথে মত্ত অবস্থায় এক যুবক ওই তরুণীকে কটূক্তি করেন। প্রথমে বিষয়টিকে তেমন আমল দেননি চিরঞ্জিৎ ও তাঁর বান্ধবী। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ওই যুবক ফের তরুণীর কাছে গিয়ে তাঁর হাত ধরে টানে এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে বলে অভিযোগ। তখন প্রতিবাদ করেন চিরঞ্জিৎ। তাঁর অভিযোগ, এর পরেই ওই মদ্যপ যুবক তার এক সঙ্গীকে ডেকে আনে। দু’জনে তাঁকে রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি পেটাতে শুরু করে। ওই তরুণী বাধা দিতে এলে তাঁকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শেষমেশ কয়েক জন পথচারী এসে চিরঞ্জিৎ ও তাঁর বান্ধবীকে উদ্ধার করেন। এর মধ্যেই কোনও মোবাইলে অভিযুক্তের ছবি তুলতে সমর্থ হন ওই তরুণ।
এর পরে আহত দুই তরুণ-তরুণী বেলঘরিয়া থানার আইসি দেবর্ষি সিংহের কাছে যান। তাঁকে মোবাইলে তোলা ছবিটি দেখান। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় মদ্যপ ওই যুবকের সঙ্গী দেবাশিসকে। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক। পুলিশ জানায়, তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। আহত চিরঞ্জিতকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিরঞ্জিতের নাকের হাড়ে চিড় ধরেছে।
এর আগে সল্টলেকে প্রকাশ্যে মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় বাসিন্দাদের গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল অভিযুক্তেরা। পাশাপশি, আরও একটি ঘটনায় একই কারণে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের বাড়ির সামনে দুই মত্ত চালকের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন সল্টলেকেরই এক বাসিন্দা। যদিও বেলঘরিয়ার ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা। ডিসি (জোন ২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘এক জন সাংবাদিক ও তাঁর বান্ধবীর উপরে আক্রমণের ঘটনায় এক জন গ্রেফতার হয়েছে। অন্য জনেরও খোঁজ চলছে।’’