নিয়ন্ত্রণ হারাল গাড়ি, মৃত শহরের দম্পতি

পুজো দিয়ে ফেরার পথে পুরুলিয়ায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল কলকাতার ব্যবসায়ী দম্পতির। তবে, ওই গাড়িতে থাকা দম্পতির শিশুপুত্র প্রাণে বেঁচেছে। আলিপুর এলাকার বাসিন্দা বিকাশ গোয়েন্কা (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মীনা গোয়েন্কা (৩১) তাঁদের এক মাত্র ছেলে বছর পাঁচেকের বিরাজকে নিয়ে শনিবার পুরুলিয়া শহরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৩:২৯
Share:

দুর্ঘটনার পরে হাসপাতালে বিরাজ গোয়েন্‌কা।

পুজো দিয়ে ফেরার পথে পুরুলিয়ায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল কলকাতার ব্যবসায়ী দম্পতির। তবে, ওই গাড়িতে থাকা দম্পতির শিশুপুত্র প্রাণে বেঁচেছে।

Advertisement

আলিপুর এলাকার বাসিন্দা বিকাশ গোয়েন্কা (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মীনা গোয়েন্কা (৩১) তাঁদের এক মাত্র ছেলে বছর পাঁচেকের বিরাজকে নিয়ে শনিবার পুরুলিয়া শহরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। রবিবার খুব ভোরে তাঁরা পুরুলিয়া থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিছুটা পথ যাওয়ার পরে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার বড়াসিনি গ্রামের কাছে তাঁদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের গাড়ি রাস্তার পাশে একটি পথ নির্দেশিকার বোর্ডে প্রথমে ধাক্কা মারে। তার পর একটি গাছে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ঢালু জমিতে গড়িয়ে গিয়ে উল্টে যায়। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই বিকাশবাবু ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বিরাজ ও গাড়ির চালক সুরেশ যাদবের সামান্য চোট লেগেছিল। পুলিশ তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

বিকাশ গোয়েন্কা ও তাঁর স্ত্রী মীনা।

Advertisement

গাড়ির চালক সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে, পুলিশ সূত্রের খবর, চালক তাদের জানিয়েছেন, চলন্ত গাড়ির সামনে একটি বাচ্চা ছেলে আচমকা চলে এসেছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। পিছনের আসনে ছিলেন ওই দম্পতি। গাড়ির মধ্যেই তাঁদের মৃত্যু হয়। সামনের আসনে চালকের পাশে থাকা শিশু বিরাজ রক্ষা পায়। এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক কৈলাশ গোয়েন্কা বলেন, ‘‘আমাদের কুলদেবীর পুজোর অনুষ্ঠান ছিল। বিকাশবাবু আমাদের কুলদেবীর মন্দিরের অছি পরিষদের সদস্য হওয়ায় এসেছিলেন। রাতটা তাঁরা একটি হোটেলে কাটিয়ে এ দিন ভোরে ফিরে যাচ্ছিলেন। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না।’’ আর এক আয়োজকের কথায়, ‘‘এ দিন ভোরে পরিচিত এক জন ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি পুলিশ দেহ দু’টি বের করেছে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে গিয়েছে ওই শিশু ও চালক। শিশুটির হাতে চোট লেগেছে।’’ পুরুলিয়া সদর হাসপতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল বিরাজকে। কৈলাশবাবুর কথায়, ‘‘শিশুটিকে কিছু জানাইনি। তবে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছে যে কথা বলতে পারছে না।’’

খবরটা আলিপুরের আবাসনে আসে ভোরবেলাতেই। গাড়ির চালক ফোন করে খবর দেন বিকাশবাবুর মেজো ভাই বিবেকবাবুকে। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। আলিপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবাসনের নীচে পরিবারের লোকেরা শোকগ্রস্ত অবস্থায় বসে রয়েছেন। পরিজনেরা জানান, রাতের মধ্যেই পুরুলিয়া থেকে দেহ নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। দম্পতির ছেলেকেও কলকাতায় আনা হচ্ছে। বিকাশবাবুদের মধ্য কলকাতায় পারিবারিক চার্টার্ড ফার্ম রয়েছে। সেখানেই তিনি কাকার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। এক আত্মীয় সজ্জন শরাফ বলেন, ‘‘পুরুলিয়ায় ওই পুজোয় মাঝেমধ্যেই ওঁরা যেতেন। কিন্তু এ বার যে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে, কেউ ভাবতে পারেনি।’’

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন