রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা এ বছরের মতো তুলে নিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। তবে একই সঙ্গে সরোবরে ছট পুজোর অনুষ্ঠানে যে কোনও ধরনের বাজি, মাইক্রোফোন এবং প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দূষণ রুখতে লেকের ছট পুজো নিয়ে বৃহস্পতিবার আরও কয়েক দফা নির্দেশিকা জারি করেছে বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত আরও জানিয়েছে, সরোবরের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি)-কে গোটা পুজোর অনুষ্ঠানটি ভি়ডিও রেকর্ডিং করতে হবে। ছট পুজো মিটে গেলে রবীন্দ্র সরোবরে এই অনুষ্ঠান চালু থাকবে কি না, সে ব্যাপারে ফের শুনানি হবে।
রবীন্দ্র সরোবর কেন্দ্রের জাতীয় হ্রদ সংরক্ষণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। পরিবেশগত দিক থেকেও এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই সরোবরে ছট পুজো ঘিরে দূষণের অভিযোগ বহু দিনের। পরিবেশকর্মীদের দাবি, কয়েক হাজার লোক পুজোর ফুল-মালা, তেল, সিঁদুর নির্বিচারে জলে ফেলায় তা দূষিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জলজ প্রাণীরা। ছট পুজোয় সরোবর এলাকায় নির্বিচারে বাজি ফাটানো হয়। তার ফলে ওই এলাকার গাছে বসবাসকারী পাখিরাও বিপন্ন হয়ে প়ড়ে। সম্প্রতি পাখিপ্রেমীরা জানিয়েছেন, সরোবর এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বাড়ছে। কিন্তু এ ভাবে দূষণ চলতে থাকলে সেই ‘অতিথি’ পাখিদের
ক্ষতি হবে।
এ সব বিষয় নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের আবেদনের ভিত্তিতে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু মঙ্গলবার শুনানির দিন কেআইটি-র কৌঁসুলি হাজির ছিলেন না আদালতে। ফলে তাঁরা বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাননি। তাঁদের আর্জির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ফের মামলাটির শুনানি হয়। কেআইটির কৌঁসুলি পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আদালতে জানান, প্রতি বছর প্রচুর লোক পুজো দিতে আসেন রবীন্দ্র সরোবরে। পুজোর মাত্র দিন কয়েক আগে তা বন্ধ করে দিলে সমস্যা হতে পারে।
কেআইটি-র আর্জি শুনে এ বছরের মতো নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে রাজি হয় ডিভিশন বেঞ্চ। তবে পরিবেশ আদালত বলেছে, পুজো দিতে আসা লোকেরা সরোবর চত্বরে কোনও বাজি, মাইক বা প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারবেন না। পুজোর জন্য সরোবর চত্বরে নির্দিষ্ট জায়গা ব্যারিকেড করে দিতে হবে। জলে জাল লাগিয়ে ঘেরাটোপ তৈরি করতে হবে। সেই ঘেরাটোপেই একমাত্র পুজো করা যাবে। তার ফলে পুজোর ফুলমালা গোটা জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। পুজো মিটে গেলে কেআইটি ও কলকাতা পুরসভাকে তড়িঘড়ি সরোবর সাফ করে দিতে হবে। পুজোর সময়ে শুধু কেআইটি ও পুরসভা ঘোষণার জন্য নির্দিষ্ট শব্দমাত্রায় মাইক ব্যবহার করতে পারবে। পুজো দিতে আসা লোকেদের জন্য পর্যাপ্ত বায়ো-টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে। মামলার আবেদনকারী সুভাষবাবু জানান, দূষণ রোধে কলকাতা পুরসভাকে জন-সচেতনতা বাড়াতে বলা হয়েছে।
ছট পুজোয় রবীন্দ্র সরোবর দূষিত হওয়া নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘এক সময়ে বছরে ৩৬৫ দিনই ভাগাড় হয়ে থাকত এই সরোবর। আজ তা পরিষ্কার করা হয়েছে। একটা মাত্র পুজোর কারণে গোটা সরোবর দূষিত হবে, এমন ভাবার কারণ নেই। যদি সরোবর কোনও ভাবে অপরিষ্কার হয়, পুরসভা এবং কেআইটি যৌথ ভাবে তা সাফ করে দেবে। সরোবরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তারা সব রকম সহায়তা করবে।’’
পৌষালিদেবী জানান, আদালত তাঁদের পুরো বিষয়টি নজরদারি করতে বলেছে। পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভি়ডিও রেকর্ডিং করতেও বলা হয়েছে। পুজোর আগে এবং পরে সরোবর এলাকার জল এবং বায়ুর দূষণ মাপবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। আগামী ২৯ নভেম্বর মামলাটির ফের শুনানি হবে। নির্দেশ মেনে এ বার ছট পুজো করা হয়েছে কি না, সে দিন আদালতকে তা নিয়ে রিপোর্ট দেবে কেআইটি, কলকাতা পুরসভা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।