COVID-19

COVID-19 Norms: সরকার নিয়ম করেছে বলে কি সব নিয়ম মানতে হবে? প্রশ্ন করোনা-বিধি ভাঙতে ‘মরিয়া’ শহরের

বিধি-ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ ওঠার পরে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার নির্দেশিকা নতুন করে জারি করেছে সরকার।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫০
Share:

অনিয়ম: নৈশ-বিধি উড়িয়ে রাত ১১টায় রাস্তাতেই চলছে ক্রিকেট। নিউ মার্কেট এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বিধি-ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ ওঠার পরে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরও কঠোর ভাবে বলবৎ করার নির্দেশিকা নতুন করে জারি করেছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি বুঝে রাতের শহরে নজরদারি বাড়িয়েছে কলকাতা পুলিশও। কিন্তু শহরবাসীর একাংশের হুঁশ ফিরছে কি? শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গা ঘুরে দেখা গেল বিধি-ভঙ্গেরই ছবি।

এসএসকেএম হাসপাতালের কাছে গুরুদ্বার সংলগ্ন হরিশ মুখার্জি রোডে রাত ১২টাতেও যেন মেলা বসেছে। দু’ধারে দাঁড়িয়ে পর পর গাড়ি, মোটরবাইক। খোলা বেশ কয়েকটি ধাবা। সেখানকার কর্মীরাই খাবার-পানীয় পৌঁছে দিচ্ছেন গাড়ি-মোটরবাইক পর্যন্ত। সেখানে সঙ্গীদের নিয়ে আসা সোনিয়া সিংহ বললেন, “রাতে ভয় নেই। দিনভর কাজের ব্যস্ততার পরে একটু খানাপিনা না হলে চলে?” কিন্তু নৈশ-বিধি চলছে যে? মাথায় লাল ফেট্টি, পরনে কালো টি-শার্ট, জিন্স পরা এক বাইক-আরোহী যুবকের প্রতিক্রিয়া— “সরকার নিয়ম করেছে। তার মানেই কি সব নিয়ম মানতে হবে?”

Advertisement

শরৎ বসু রোডের ধারে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাবা এবং রেস্তরাঁ। তাদের কয়েকটির সামনে রাত সাড়ে ১২টাতেও বেজায় ভিড়। আলো নিভিয়ে খাবার বিক্রি চলছে। কেউ খাবার-পানীয় কিনে গাড়ির বনেটে রেখেই জন্মদিন পালন করছেন। কেউ আবার সেখানেই মধ্যরাতের আড্ডা জমিয়েছেন। জন্মদিন পালন করা ভিড়টার সঙ্গে কথা বলতে গেলেন এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। ফিরে এসে জানালেন, জন্মদিন বলে ছাড় দেওয়া হল। কয়েক মিনিটেই চলে যাবেন ওঁরা। কিন্তু কার্ফুর শহরে রাস্তায় জন্মদিন? ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর জবাব, “রেস্তরাঁটি বন্ধ করাতে যাচ্ছি। সেটা হলে ভিড়ও থাকবে না।”

রাত দেড়টায় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে দেখা গেল, এক দিকে দাঁড়ানো পুলিশের গাড়ি, অন্য দিকে ফাস্ট ফুডের দোকানে চলছে দেদার বিক্রি। খাওয়াদাওয়ার মধ্যেই এক তরুণী বললেন, “ওই তো পুলিশ দাঁড়িয়ে, বিধিনিষেধ থাকলে ওঁরাই তো আটকাতেন! তা ছাড়া দিনের বেলা এত ভিড়ে বেরিয়ে যেখানে করোনা হচ্ছে না, সেখানে রাতের ফাঁকা শহরে খেতে বেরোলে কী হবে?”

Advertisement

অনিয়ম: ঘড়িতে তখন সাড়ে ১১টা। বালিগঞ্জ রোডে একটি খাবারের দোকানের শাটার অর্ধেক নামিয়ে চলছে বিক্রিবাটা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বিধি ভেঙে পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলে রাতভর নাচগানের আসর বসানোর অভিযোগ সামনে আসার পরে সেখানে বেড়েছে পুলিশের নাকা তল্লাশি। তবু কয়েকটি রেস্তরাঁ খোলা ছিল রাত ১২টা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে মোটরবাইক এবং অকারণে পথে নামা গাড়ির দৌরাত্ম্য। পুলিশের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সিগন্যাল ভাঙল যাত্রীবোঝাই একটি বাসও। মাস্কহীন এক বাইক-আরোহীকে দাঁড় করিয়ে, তাঁকে মাস্ক পরিয়ে এত রাতে পথে বেরোনোর কারণ জানতে চাইলেন এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। যুবকের উত্তর, রাতে বাইরে ঘোরা নিষিদ্ধ, এমন খবর তিনি শোনেনইনি! অবাক পুলিশকর্মীর পাল্টা প্রশ্ন, “আপনি এ রাজ্যেই থাকেন তো?”

পার্ক সার্কাস এলাকার পানশালা-রেস্তরাঁ বন্ধ থাকলেও ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানার বালাই নেই। পুলিশের গাড়ি টহল দিলেও তাদের সামনে দিয়েই বেপরোয়া গতিতে বেরিয়ে গেল একাধিক মোটরবাইক। যার মধ্যে একটিতে সওয়ার ছ’জন— চালকের সামনে এক শিশু, পিছনে দুই বালক, তারও পিছনে কোলে শিশুকে নিয়ে এক মহিলা। এই দৃশ্য দেখেও বাইকটিকে ধরা হল না কেন? সেখানে উপস্থিত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর উত্তর, “চোখের নিমেষে বেরিয়ে গেল তো!”

রাতের রাজপথে পুলিশি কড়াকড়ি সত্ত্বেও এমন বিধি-ভঙ্গ চলে কী করে? লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার শুধু জানিয়েছেন, বিষয়টি দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন