tallah bridge

রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে নির্দেশ নগরপালের, কিন্তু টালা সেতু নিয়ে হিমশিম খেল পুলিশ

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প হিসাবে বেইলি ব্রিজের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখনও উপযুক্ত জায়গা পাইনি, যেখানে বেইলি ব্রিজ তৈরি করা যায়।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:২৯
Share:

টালাসেতুর দু’পাশে বাঁশের ব্যারিকেড করে রাস্তার পরিসর কমানো হচ্ছে—— নিজস্ব চিত্র

পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার পর বুধবার খুলল রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিস এবং অধিকাংশ স্কুল। ফলে রাস্তায় চাপ বাড়বে আশঙ্কা করেই মঙ্গলবার রাতেই ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের সতর্ক করেছিলেন অতিরিক্ত নগরপাল। এ দিন সকালে সে কথাই ফের এক বার মনে করিয়ে দেন নগরপাল অনুজ শর্মা নিজে। তার পরেও টালা ব্রিজ বন্ধের জেরে উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে যানজট সামলে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে হিমশিম খেল কলকাতা ট্রাফিক।

Advertisement

গত ৯ অক্টোবর মুম্বইয়ের সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না টালা সেতু নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ওই সেতুর একটা বড় অংশই (মূলত রেল লাইনের উপরে থাকা অংশ) ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ সেতু বন্ধ থাকবে আরও বেশ কয়েক মাস। এর পরেই পরিবহণ দফতর এবং কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ ফের চেষ্টা করে বিকল্প পথ তৈরির। কিন্তু, পরিবহণ দফতরের আধিকারিক থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক সন্তোষ পান্ডে নিজে একাধিক বার টালা সেতু এবং আশপাশের এলাকা ঘুরে এসে বিকল্প রাস্তা পেতে ব্যর্থ হন। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প হিসাবে বেইলি ব্রিজের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখনও উপযুক্ত জায়গা পাইনি, যেখানে বেইলি ব্রিজ তৈরি করা যায়।”

লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত ছুটির কারণে রাস্তায় চাপ কম ছিল। ফলে বিকল্প রাস্তা দিয়ে মোটামুটি মসৃণ ভাবেই যান চলাচল করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হয় লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ গত সোমবার। ওই দিন অফিসের ব্যস্ত সময় চিড়িয়া মোড় থেকে পাইকপাড়া মোড় পর্যন্ত ব্যাপক যানজট শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, টালা সেতুর বর্তমান যা অবস্থা তাতে যে বিপুল সংখ্যক ছোট গাড়িও সেতু পেরোচ্ছে তা-ও বিপজ্জনক। তাই গাড়ির চাপ কমাতে পাইকপাড়া মোড়ে বিটি রোডের শ্যামবাজার অভিমুখের সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে ছোট গাড়ির চাপও কম রাখা শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: গভীর রাতে পানশালায় বেআইনি নাচগান, গায়িকাকে হেনস্থা, পুলিশের জালে পাণ্ডারা

টালা সেতু বন্ধ থাকায় যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।— নিজস্ব চিত্র

এর ফলে বাস-সহ বড় গাড়ি, যেগুলোর ওই মোড় থেকে বাঁ দিকে রাজা মণীন্দ্র রোড ধরে বেলগাছিয়া সেতুর কাছে পৌঁছনোর কথা, সেগুলো সারিবদ্ধ ভাবে আটকে পড়ে। এর মধ্যেই বিটি রোডে চলা অন্তত ন’টি রুটের বাস মালিকরা পরিবহণ দফতরের দেওয়া পরিবর্তিত রুট অলাভজনক বলে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। অন্য একাধিক রুট যেমন ব্যারাকপুর-বাবুঘাটের মধ্যে চলা ৭৮ এবং সাজিরহাট-বাবুঘাটের মধ্যে চলা ২১৪ রুটের বাসগুলি যাত্রাপথ কমিয়ে দেয়, যা বাস চালকদের পরিভাষায় কাটা রুট।

১ অক্টোবর টালা সেতু বন্ধ হওয়ার পর অনেক বাসের রুট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দমদম রোড-নাগেরবাজার-যশোর রোড দিয়ে। সেই সমস্ত বাসের মালিকরা অভিযোগ করেন যে, ওই রাস্তায় অনেক বেশি ঘুরতে হচ্ছে। ফলে লোকসান হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে তাই কিছু বাসকে পাইকপাড়া মোড় থেকে রাজা মণীন্দ্র রোড ধরে দু’টি রাস্তায় ভাগ করে দেওয়া হয়। কিছু বাস সোজা মণীন্দ্র রোড ধরে বেলগাছিয়া যাবে। বাকিগুলো টালা পার্ক রোড ধরে পরেশনাথ মন্দিরের পাশ দিয়ে বেলগাছিয়া সেতুতে পৌঁছবে। তৃতীয় রুট, দমদম রোড ধরে সেভেন ট্যাঙ্কস থেকে নদার্ন অ্যাভেনিউ ধরে বেলগাছিয়া।

আরও পড়ুন: টালার জের, ফের বাসের রুট পরিবর্তন

বিটি রোডে পাইক পাড়া থেকে শুরু হওয়া জ্যাম ছাড়িয়ে গিয়েছে চিড়িয়া মোড়।— নিজস্ব চিত্র।

বুধবার সকাল থেকে ওই তিনটি রাস্তাতেই চাপ বাড়তে থাকে ছোট গাড়ির। ফলে বেলা ১০টার পর থেকেই দমদম রোড এতটাই মন্থর হয়ে যায় যে, ওই রাস্তাতে নির্দিষ্ট গাড়িগুলিকে পাইকপাড়া দিয়ে ঘোরাতে হয়। সেখানেও বাড়তি চাপ পড়ায় শ্লথ হয়ে যায় গাড়ির গতি। সেই সঙ্গে পাইকপাড়া থেকে যানজট চিড়িয়ামোড় ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় শীলস গার্ডেন পর্যন্ত। এর মধ্যেই টালা সেতুতে ছোট গাড়ির চাপ কমাতে বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হচ্ছে রাস্তার পরিসর কমাতে।

ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের আশঙ্কা, এমনিতেই পরিস্থিতি ভয়াবহ। আরও সমস্যা বাড়বে, যদি বিশেষজ্ঞরা বেলগাছিয়া সেতুতেও যান নিয়ন্ত্রণ করতে বলেন। একটাই সমাধান— যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টালা সেতুকে সচল করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন