বাজি-গড়: চলছে ফুলঝুরি তৈরির কাজ। শুক্রবার, চম্পাহাটিতে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
শহরের অলিগলি বা রাজপথের যত্রতত্র বাজির দোকান নিয়ে পুলিশের সামনেই ক্ষোভ উগরে দিলেন বাজি ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার শহরে বাজি বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল কলকাতা পুলিশ, দমকল, সিইএসসি এবং সেনাবাহিনী। বাজি ব্যবসায়ীদের দু’টি প্রধান সংগঠনের তরফে দাবি জানানো হয়েছে, শহরে বাজি বাজারের বাইরে বাজি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। লেক টাউনের একটি বাজি বাজার নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। শহরের বিভিন্ন অবৈধ দোকানে চিনা বাজির বিক্রি রুখতেও পুলিশকে আবেদন করেছেন বাজি ব্যবসায়ীরা।
পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, বেআইনি বাজি বিক্রি বন্ধ করতে অভিযান হবে। বাকি অভিযোগও খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। এর পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত নির্ধারিত সময়সীমা মেনে থানা স্তর থেকে প্রচার চালানো হবে। বাজি বাজারগুলিকেও এ সম্পর্কে ক্রেতাদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় নয়। না-হলে লালবাজারের অদূরে ক্যানিং স্ট্রিট, এজরা স্ট্রিট জুড়ে সার দিকে বাজির অস্থায়ী দোকান বসে পড়ত না। বিভিন্ন থানার গায়েই দোকান বসে। সেগুলির কোনও অনুমতি না থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ দেখেও দেখে না। এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কি সেই ছবিটা বদলাবে?
পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট লাইসেন্সবিহীন বাজি ব্যবসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কলকাতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাজি ব্যবসীয়ারা একমাত্র বাজি বাজারগুলিতেই দোকান দেন। তা ছাড়া, এ বার বাজি পো়ড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ফলে এ বারও অবৈধ দোকান বসলে বাজি বাজারগুলি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’
সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, ‘‘লেক টাউনে কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কয়েক বছর ধরে বাজি বাজার বসছে। ন্যূনতম সুরক্ষাও না থাকায় যে কোনও সময়ে ব়ড় বিপদ ঘটতে পারে। ওই এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় না পড়লেও যাতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনারেটকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে বলা হয়, সেই আর্জি জানানো হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, গড়িয়া এলাকাতেও লাইসেন্সবিহীন বাজি বিক্রির রমরমা রয়েছে। সেখানেও বৈধ বাজি ব্যবসায়ীরা সমস্যায় প়ড়ছেন। এই বিষয়টিও পুলিশের নজরে আনা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দূষণ কমাতে পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করতে হবে। বাজিতে ব্যবহৃত কয়েকটি রাসায়নিকের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওই সমস্ত রাসায়নিকের ব্যবহার প্রসঙ্গে এ দিনের বৈঠকে বাজি ব্যবসায়ীরা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছেন, এ বছর সমস্ত বাজি তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। ফলে পরিবেশবান্ধব বাজি এ বছর তৈরি করা যাবে না। আগামী সোমবার বেলা ১১টায় টালা পার্কে বাজির আইনি পরীক্ষা হবে। অনেকেরই প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম মেনে এ বছর কি শব্দমাত্রার পাশাপাশি বাজির ধোঁয়ার মাত্রাও পরীক্ষা করা হবে? শুভঙ্করবাবু জানান, এ বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে বৈঠকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, এ রাজ্যে বা দেশে তৈরি বাজির থেকে চিনা বাজি বেশি দূষণ ছড়ায়।
এ সবের পাশাপাশি এ দিন বাজি বাজারের অনুমতি আদায়ের জন্য ‘এক জানলা ব্যবস্থা’ বা ‘সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম’ চালু করার দাবি জানানো হয়েছে। বাজি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, নানা দফতরে ঘুরে অনুমতি আদায়ে সময় নষ্ট হয়। হয়রানিও হয়। পুলিশ আগামী বছর থেকে সেই ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছে। যদিও বাবলাবাবুর বক্তব্য, ‘‘এর আগেও বহু বার এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।’’