Calender

ছোটদের জন্য ক্যালেন্ডারের পাতায় লকডাউন-গাথা

‘‘২০২০ সালটা অভিশপ্ত মনে হলেও ইতিহাসের বছর। অনেক কিছু শেখারও। তাই আমরা চেয়েছিলাম, ছোটদের জন্য ২০২০-র শিক্ষাটাই ২০২১-এর ক্যালেন্ডারের পাতায় ছড়িয়ে দিতে।’’

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

লকডাউনের স্মৃতি বিজড়িত সেই ক্যালেন্ডারের একটি পাতা।

এত দিনে নতুন বছরে ধাতস্থ সকলেই। ২০২১-এর সিকিভাগ পার হয়ে যাবে শিগগির। কিন্তু ২০২০-র লকডাউন-স্মৃতিও রীতিমতো দগদগে। অতিমারির জেরে দেশে প্রথম লকডাউনের বর্ষপূর্তিও আসন্ন। রাজ্যে স্কুলে স্কুলে ক্লাস চালুর পর্ব শুরু হওয়ার পরে কোথাও কোথাও ছোটদের জন্য পার করা বছরটার স্মৃতিভরপুর অভিনব ক্যালেন্ডার ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন।

Advertisement

‘‘২০২০ সালটা অভিশপ্ত মনে হলেও ইতিহাসের বছর। অনেক কিছু শেখারও। তাই আমরা চেয়েছিলাম, ছোটদের জন্য ২০২০-র শিক্ষাটাই ২০২১-এর ক্যালেন্ডারের পাতায় ছড়িয়ে দিতে।’’— বলছিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। এ সব ভেবেই ক্যালেন্ডারের কাজটা শুরু হয়। তখনও পুরোদমে লকডাউন চলছে। গোটা দেশ গৃহবন্দি। দূর থেকেই বিভিন্ন হোমের ছোটদের পরিস্থিতির তদারকি করা বা ঘরবন্দি জীবনে ছোটদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার মধ্যেই ক্যালেন্ডার-ভাবনা দানা বাঁধছিল। কমিশনের সদস্য, আধিকারিক, উপদেষ্টারা মিলে ভাবতে ভাবতেই বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছিল।

করোনাকালকে কোন চোখে দেখবে ছোটরা? ছোটদের জন্য ক্যালেন্ডারে কোনও বিভীষিকাময়, ভয়ঙ্কর ছবি রাখতে চাননি ক্যালেন্ডার-নির্মাতারা। অনন্যা বলছিলেন, ‘‘এই লকডাউন বরং ছোটদের বুঝতে শিখিয়েছে চার পাশের অনেক অখ্যাত মানুষের গুরুত্বও। স্কুলে যেতে না-পারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণার থেকেও এই সংযোগ আবিষ্কারের আনন্দকেই আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।’’ বিষয়টা শুনেই চট করে কাজটা মনে ধরে যায় চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি বলছিলেন, ‘‘ছোটদের ভাল লাগতে হবে বা তারা সহজে বুঝতে পারবে— এমন ছবি আঁকা কিন্তু সহজ নয়।’’ সুব্রতবাবু প্রথমে ভাবছিলেন, ডাক্তার, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, প্রশাসন ইত্যাদির সঙ্গে ছোটদের সম্পর্কটা বোঝাতে কি অনেক মানুষ আঁকবেন? কমিশনের সুদেষ্ণা রায়, মহুয়া সাঁতরাদের সঙ্গে আলোচনায় শেষমেশ মনে হয়, বিষয়টা সাঙ্কেতিক ভাবে ফুটিয়ে তোলাই ভাল। পোস্টার কালার, জলরঙের কারুকাজ শুরু হয় এর পরেই। ছোটদের কথা ভেবে ক্যালেন্ডারে ডাক্তারবাবুর স্টেথোস্কোপের সঙ্গে রকমারি ফুলের ছবি ভুলিয়ে দিতে চাইছে কষ্ট আর যন্ত্রণার স্মৃতি। স্যালাইনের নল, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রঙিন ফুল, প্রজাপতিরা ক্যালেন্ডারে রাজত্ব করছে। ফুলে ঢাকা সেনাবাহিনীর বুটেও চোখরাঙানি নেই। ছবি অনুযায়ী ক্যালেন্ডারের লেখাও পাল্টানো হয়েছে।

Advertisement

তবে ক্যালেন্ডারের পাতায় কোনও মুখ না থাকলেও উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি চরিত্র। ডাক্তারবাবু, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী, স্কুলশিক্ষিকা, প্রশাসনের মুখ ছাড়া রয়েছে ‘অ্যাম্বুল্যান্স কাকু’, ‘সাফাইকর্মী দাদা’, ‘পুলিশ পিসিমণি’, ‘এনজিও দাদু’, ‘নার্স দাদা’ বা ‘পাড়ার মুদি দিদা’ও। কোনও ছবিতেই পুরুষ বা মহিলার মুখ নেই। কিন্তু ছোটদের মনে নানা পেশা ঘিরে পরিচিত ছাঁচ বা ‘জেন্ডার স্টিরিয়োটাইপ’টাকেও ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। অনন্যার কথায়, ‘‘পুলিশ অফিসার পুরুষ হবেন বা নার্সকে মহিলা হতেই হবে, এই ধারণাগুলোও শেষ কথা নয়। ক্যালেন্ডারে সেটাও আমরা মাথায় রেখেছি।’’ পুলিশ বা সাংবাদিকের ছবিগুলি টুপি, বেল্ট বা খবরের চ্যানেলের মাইক্রোফোনের মতো ছোট ছোট প্রতীকে স্পষ্ট। ছোট ছোট গল্পের মতো ‘ক্যাপশনে’ বিপদের দিনে সহায় মুদির দোকানের বৃদ্ধা দিদা, দুঃসাহসী সাফাইকর্মী— সবার প্রতি ঋণ স্বীকারটুকুও ছোটদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের মুখ হিসেবে উঠে এসেছে, কোয়রান্টিন কেন্দ্র দেখভালের কাজে বা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দায়িত্বে থাকা কোনও সরকারি কর্ত্রীর কথা। নিজে কোভিড হওয়ার ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে যিনি স্বমহিমায় ফিরে আসছেন। ছবিতে হাসপাতালের স্যালাইনের নল বেঁধা হাত ও পিপিই পরা একটি হাতের করমর্দন। সেই ছবিটি ঘিরেও ফুল-প্রজাপতির মোটিফ।

লকডাউনের বর্ষপূর্তিতে ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে ছোটদের জন্য সাহস ও ভালবাসার প্রেরণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন