‘সন্ন্যাসী’র জপের থলিতে ৩ কেজি সোনা

কথা বলছিলেন না ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাসী’। মুখে কাপড় বাঁধা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত গেরুয়া বসনে মোড়া। তাঁকে ঘিরে আরও চার ‘সন্ন্যাসী’ ছিলেন ওই একই পোশাকে। তাঁরা অবশ্য কথা বলছিলেন। তাঁরাই জানিয়ে দিলেন, ওই ‘মৌনী সন্ন্যাসী’ দলের প্রধান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৮
Share:

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

কথা বলছিলেন না ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাসী’। মুখে কাপড় বাঁধা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত গেরুয়া বসনে মোড়া। তাঁকে ঘিরে আরও চার ‘সন্ন্যাসী’ ছিলেন ওই একই পোশাকে। তাঁরা অবশ্য কথা বলছিলেন। তাঁরাই জানিয়ে দিলেন, ওই ‘মৌনী সন্ন্যাসী’ দলের প্রধান।

Advertisement

মঙ্গলবার ভোরে তখন সবে ব্যাঙ্কক থেকে কলকাতায় নেমেছে ইন্ডিগোর বিমান। লটবহর নিয়ে ওই পাঁচ সন্ন্যাসী বিমানবন্দরের বাইরে যাওয়ার মুখে তাঁদের পথ আটকান শুল্ক অফিসারেরা। তাঁরা কথা বলার চেষ্টা করেন সেই প্রধান সন্ন্যাসীর সঙ্গে। কিন্তু তখনই হাঁ হাঁ করে ওঠেন বাকি চার জন। তাঁরা জানান, প্রবীণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ধ্যানে রয়েছেন। কাজেই এখন তাঁকে কোনও ভাবে বিরক্ত করা যাবে না। প্রধান সন্ন্যাসীর ডান হাতে তখন জপের থলি। তর্জনী থেকে হাত সেই থলির ভিতরে ঢোকানো। কিন্তু শুল্ক অফিসারেরা কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। একে তো যত সব সোনা পাচার হচ্ছে সবই ব্যাঙ্কক থেকে। তার উপরে আবার প্রবীণ সন্ন্যাসীর ধারেকাছেও ঘেঁষতে দিচ্ছেন না বাকি চার জন। সন্দেহ ক্রমেই ঘনীভূত হয়।

সাধারণত পাসপোর্ট পরীক্ষা করে না শুল্ক দফতর। তা করার কথা অভিবাসন দফতরের। কিন্তু, ওই প্রবীণ সন্ন্যাসীর পাসপোর্ট চেয়ে নেন শুল্ক অফিসারেরা। আর তা দেখেই চোখ ছানাবড়া অফিসারদের। পাসপোর্টে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর নাম লেখা হাসান গনি। বাড়ি চেন্নাই। বাকি চার জনের পাসপোর্ট থেকেও বেরিয়ে পড়ে মুসলিম নাম। দেখা যায়, তাঁরাও চেন্নাইয়েরই বাসিন্দা। শুরু হয় তল্লাশি।

Advertisement

তবে বাকি চার জনের কাছ থেকে কিছু না মিললেও দলের প্রধান মৌনী সন্ন্যাসীর কাছে থাকা চামড়া দিয়ে তৈরি জপের থলি থেকেই বেরিয়ে পড়ে সোনা। বিস্কুট ছাড়াও মেলে ২২ ক্যারেটের হার।

প্রায় তিন কিলোগ্রাম ওই সোনার দাম ৭০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি বলে জানিয়েছে শুল্ক দফতর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে এলে শুল্ক দফতর ‘বিরক্ত’ করবে না বলে তাঁদের ধারণা ছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, জপের থলির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িয়ে থাকে। সেখানে দুম করে তল্লাশি করতে সাহস পাবেন না শুল্ক অফিসারেরা। তার উপরে যাঁর কাছে সোনা ছিল, তিনি যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে মৌনী সেজে থাকেন, তা হলে আর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা যাবে না।

সব পরিকল্পনাই অবশ্য বানচাল হয়ে যায়। হাসান গনিকে গ্রেফতার করে এ দিনই বারাসত আদালতে তোলা হয়েছিল। আপাতত তাঁকে জেলে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাকি চার জনের কাছ থেকে কিছু না মেলায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন