নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেই চলছে সাইবার-লুট

বহুল পরিচিত কোনও ব্র্যান্ডের নামের বানানে সামান্য হেরফের ঘটিয়েই সাইবার অপরাধীরা তৈরি করে ফেলছে ভুয়ো ওয়েবসাইট। সেই সাইটে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করলেই গ্রাহকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে সমস্ত টাকা! তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এ ভাবেই অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বহুল পরিচিত কোনও ব্র্যান্ডের নামের বানানে সামান্য হেরফের ঘটিয়েই সাইবার অপরাধীরা তৈরি করে ফেলছে ভুয়ো ওয়েবসাইট। সেই সাইটে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করলেই গ্রাহকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে সমস্ত টাকা! তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এ ভাবেই অসংখ্য মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ আসছে বিস্তর। লালবাজারের সাইবার সেলের এক অফিসার জানাচ্ছেন, স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসেও এ নিয়ে সচেতনতা শিবির করেছেন তাঁরা। তবু অনেকেই এখনও যথেষ্ট সচেতন নন। এ নিয়ে সচেতন না হলে এমন কাণ্ড ঘটতেই থাকবে।

Advertisement

দমদম রোডের বাসিন্দা সৌমিত্র নাথ চাকরির খোঁজ করতে গিয়ে তাঁর ই-মেলে একটি লিঙ্ক পেয়েছিলেন। তাতে ক্লিক করে তিনি তাঁর বায়োডেটা পাঠান এবং তার পরে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ২০০ টাকা জমা দেন। সেই টাকা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর পরেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা উধাও হয়ে যায়। নিউ টাউনের বাসিন্দা মৌমিতা চক্রবর্তী জানান, একটি পরিচিত সংস্থা অনলাইনে একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে লোভনীয় অফার দিয়েছিল। সেই লিঙ্কে ক্লিক করেই তিনি প্রতারিত হয়েছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, যে লিঙ্কে মৌমিতা বা সৌমিত্র ক্লিক করেছিলেন, সেগুলি ভুয়ো লিঙ্ক।

সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্র জানান, সাইবার অপরাধীরা পরিচিত ব্র্যান্ডের নামের সামান্য হেরফের ঘটিয়ে ‘ডোমেন হোস্টিং’ সংস্থার কাছ থেকে নতুন ওয়েবসাইট কিনে ফেলছে। ওই পরিচিত ব্র্যান্ডের মতোই অবিকল ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলছে তারা। তার পরে ওই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক মেল করে দিচ্ছে বিভিন্ন জনকে। সেই ওয়েবসাইট খুঁটিয়ে না দেখে লিঙ্কে ক্লিক করে কেনাকেটা করতে গিয়েই ঘটে যাচ্ছে বিপত্তি। অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘যে মুহূর্তে ওই ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিক করে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিং দিয়ে কেউ কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, তখনই হ্যাকারের হাতে সেই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য চলে

Advertisement

আসছে। কার্ডের নম্বর থেকে সিভিভি নম্বর— সবই পেয়ে যাচ্ছে তারা। এমনকি, ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড)-ও চলে আসছে হ্যাকারের কাছে। এর পরে সুযোগ বুঝে ওই গ্রাহকের ব্যাঙ্কে জমানো পুরো টাকাই গায়েব করে দিচ্ছে তারা।

কী ভাবে এই বিপদের হাত থেকে বাঁচা যায়?

সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘কোনও ওয়েবসাইট ভুয়ো কি না, তা বোঝা যায় খুব সহজে। ওই সাইটের ইউআরএল-এ এইচটিটিপিএস আছে কি না দেখতে হবে। কোনও ওয়েবসাইটে যদি এইচটিটিপি-র সঙ্গে এস না থাকে, তা হলে বুঝতে হবে, সেই ওয়েবসাইটটি ভুয়ো। আমরা বারবার সবাইকে এ নিয়ে সর্তক করছি।’’ অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘আর্থিক লেনদেন করার আগে ওয়েবসাইটটি ভুয়ো কি না, তা দেখতে ই-মেলে আসা লিঙ্কটি গুগলে সার্চ করলেই বোঝা যাবে। গুগল ওই ওয়েবসাইটের নামের বানান ঠিক আছে কি না প্রশ্ন করবে। কিছু প্রশ্ন করা মানেই সেই ওয়েবসাইটটি সন্দেহজনক। টাকা লেনদেন না করাই ভাল।’’

লালবাজারের সাইবার সেলের অফিসারেরাও বলছেন, ওয়েবসাইটের নামের বানান ভাল করে দেখে নিয়ে তার পরেই আর্থিক লেনদেন করা উচিত। এক অফিসারের কথায়, ‘‘আজকাল বেশির ভাগ মানুষই মোবাইলের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। মোবাইলের স্ক্রিন ছোট হওয়ায় অনেক সময়ে নামের বানান ঠিকমতো খেয়াল করেন না অনেকে। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। তাই মোবাইলের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে গেলে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন