ফণী না এলেও রইল গাছ পড়ার আশঙ্কা

এমনই আশঙ্কা থেকে পুরসভায় প্রস্তুত ছিল এক ডজন হাইড্রলিক মই। দুই ডজনেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় করাত। আর জনা পঞ্চাশেক অভিজ্ঞ কর্মীকে নিয়ে গড়া গাছকাটার একাধিক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০০:২৩
Share:

দুর্বল: অল্প ঝড়েই শহরে উপড়ে যায় বেশ কিছু গাছ। চলছে সেগুলি সরানোর কাজ। সল্টলেক মেলা প্রাঙ্গণ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ফণীর দাপটে উপড়ে যেতে পারে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থাকা গাছ।

Advertisement

এমনই আশঙ্কা থেকে পুরসভায় প্রস্তুত ছিল এক ডজন হাইড্রলিক মই। দুই ডজনেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় করাত। আর জনা পঞ্চাশেক অভিজ্ঞ কর্মীকে নিয়ে গড়া গাছকাটার একাধিক দল। শেষমেশ কলকাতায় ফণীর প্রভাব তেমন না পড়ায় স্বস্তি পায় পুর প্রশাসন। তবে যে টুকু ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে, তাতেই শহর জুড়ে গোটা পনেরো গাছের কোনওটা উপড়ে গিয়েছে, কোনওটার বা ডাল ভেঙেছে।

পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, বালিগঞ্জের মার্লিন পার্কে এবং উত্তর কলকাতায় কাঁকুড়গাছিতে দু’টো বড় গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়ে রাস্তায়। ভোর রাতে ওই ঘটনার পরে পুরসভার কর্মীরা গিয়ে ওই গাছ দু’টি কেটে সরিয়ে দেয়। সাতসকালে ওই কাজ সম্পন্ন হওয়ায় রাস্তায় যান চলাচলে কোনও সমস্যা হয়নি বলে দাবি দেবাশিসবাবুর। কয়েকটি জায়গায় গাছের ভাঙা ডাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

Advertisement

তবে ফণীর ফাঁড়া কাটলেও কলকাতা শহরে সামান্য ঝড়বৃষ্টিতে গাছ পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর উপরে রয়েছে নিম্নচাপ এবং কালবৈশাখীর হাতছানিও। ফণী’র মোকাবিলা করতে গিয়ে তেমনই আভাস দিচ্ছিলেন পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার। তিনি জানান, একটা গাছ অশক্ত হয়ে যেতে দেখেও চট করে কিছু করা যায় না। প্রায়ই পুরসভায় অভিযোগ আসে গাছটি কেটে ফেলতে। না হলে ঝড়ে পড়ে গিয়ে বিপদ ঘটাতে পারে। কিন্তু অভিযোগ এলেই গাছ কেটে ফেলা যায় না। নিয়ম মতো পরিবেশ ও বন দফতরের মতামত নিয়ে তা কাটতে হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে শহরে প্রায় ২৫০টি গাছ রয়েছে যেগুলি কেটে ফেলা দরকার। না হলে ঝড়বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়ে যেতে পারে। কিন্তু পরিবেশের কথা ভেবে অনেক সময়ে আগ বাড়িয়ে কিছু করা যায় না। পুরসভার উদ্ভিদবিদকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফণী আছড়ে পড়ার আগের দিন রেড রোডের আশপাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া নিয়ে পুরভবনে আলোচনা করছিলেন পুরসভার একাধিক পদস্থ কর্তা। ঝড়ে সেই সব গাছ ভেঙে পড়তে পারে এমনই আশঙ্কা ছিল। কারণ ওই রাস্তায় ভিআইপিদের যাতায়াত বেশি, তাই চিন্তাও বেশি।

পুরকর্তৃপক্ষ জানান, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে ঠিক করা হয়, ঝড়ে পড়ে যেতে পারে অথবা বাড়ির ভিত নষ্ট করতে পারে শহরে এমন কোনও গাছ লাগানো হবে না। তার পরিবর্তে নিম, ছাতিম, রঙ্গনের মতো ফুল গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে সেই কাজ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু যে গাছগুলি পড়ে গিয়ে বিপর্যয় আনতে পারে যেমন, বট, অশ্বত্থ সেগুলির গণনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, সেক্ষেত্রেও প্রয়োজন বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে প্রশাসনিক সমন্বয়, এমনটাই দাবি ছিল কলকাতা পুরসভার। কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের বক্তব্য, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তো আছেই। এমনকি, বিভিন্ন সরকারি দফতরও যেমন পূর্ত দফতর, কেএমডিএও গাছ লাগায়। অবশ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর থেকেও জানানো হয়েছে, পুরসভার গাছ কাটার যে পরিকাঠামো রয়েছে তা তাঁদের নেই। আয়লার ঘটনার পরে ঠেকে শিখেছে পুর প্রশাসন। তাই ‘ফণী’র পূর্বাভাস পাওয়ার পরেই গাছ সরাতে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে ‘সমন্বয়’ রেখেই গাছ সরানোর পরিকল্পনা করেছিল পুর কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন