কাবুলিওয়ালাদের মাথায় বন্দুক ধরে ফ্ল্যাটে ডাকাতি

অতিথিদের নিয়ে সবে খেতে বসেছিলেন দুই কাবুলিওয়ালা। পাতে গরম খাবার পরিবেশন করছিলেন দুই পরিচারক। আচমকাই ঘরে ঢুকে পড়ল চার যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ছ’জনকেই বেঁধে ফেলল তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
Share:

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অতিথিদের নিয়ে সবে খেতে বসেছিলেন দুই কাবুলিওয়ালা। পাতে গরম খাবার পরিবেশন করছিলেন দুই পরিচারক। আচমকাই ঘরে ঢুকে পড়ল চার যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ছ’জনকেই বেঁধে ফেলল তারা। তার পরে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা, আংটি, ঘড়ি এবং মোবাইল নিয়ে চম্পট দিল। পালানোর আগে বাইরে থেকে দরজাও বন্ধ করে দিয়েছিল ওই চার দুষ্কৃতী!

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ চাঁদনি চক স্ট্রিটের একটি বাড়িতে এ ভাবেই ডাকাতি হয়েছে। বৌবাজার থানা ও লালবাজারের ডাকাতি দমন শাখা তদন্ত শুরু করে দু’জনকে আটক করলেও শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। চাঁদনি চকের মতো ঘিঞ্জি এবং ব্যবসাকেন্দ্রে এমন লুঠের ঘটনায় শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। পুলিশের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, ঘটনা নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে। সেগুলি স্পষ্ট হলেই এই ডাকাতির কিনারা হবে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনও সিসিটিভি না থাকায় দুষ্কৃতীদের ছবিও মেলেনি।

পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদনি চক স্ট্রিটের একটি বহুতলের চারতলার ফ্ল্যাটে শের আফজল খান ও ওয়াহিদ খান নামে দুই কাবুলিওয়ালা ১২ বছর ধরে রয়েছেন। শুক্রবার রাতে তাঁরা দুই আত্মীয়কে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সে সময়ে আফজলদের রাঁধুনি ও তাঁর এক পরিচিত যুবকও সেখানে ছিল। পুলিশের কাছে আফজলের অভিযোগ, রাত সাড়ে আটটার পরে খেতে বসার সময়েই আচমকা চার যুবক ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং ওয়াহিদের মাথায় বন্দুক ঠেকায়। দুষ্কৃতীদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল এবং মাথায় ছিল কালো টুপি। তারা নিজেদের মধ্যে উর্দু মেশানো হিন্দিতে কথা বলছিল। প্রথমেই ওয়াহিদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁদের চিৎকার করতে বারণ করে। এর পরে চার কাবলিওয়ালার পাশাপাশি ওই দুই রাঁধুনিকে পিছন থেকে বেঁধে ফেলে তারা। পুলিশের দাবি, ছ’জনকে বাঁধার পরে তাঁদের কাছে আলমারির চাবি চায় দুষ্কতীরা। আফজলের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। টাকা হাতানোর পরে ওই ছ’জনের মুখ বেঁধে পাশের ঘরে নিয়ে যায়। এর পরে মোবাইল ফোন, ঘড়ি, আংটি লুঠ করে বাইরে থেকে সদর দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে পালিয়ে যায় চার দুষ্কৃতী।

Advertisement

আফজলের দাবি, দুষ্কতীরা চলে যাওয়ার পরে ওয়াহিদ কোনও রকমে নিজেকে বাঁধনমুক্ত করে। একটি মোবাইল দুষ্কৃতীদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। সেটা থেকেই ওয়াহিদ মুসা খান নামে এক পরিচিতকে ফোন করেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা মুসা এসে তাঁদের উদ্ধার করেন এবং থানায় খবর দেন। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা ঘর লন্ডভন্ড। আফজল বলেন, ‘‘এত বছর এই এলাকায় বসবাস করছি। এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।’’ ছ’জন থাকলেও কেউ বাধা দিলেন না কেন? কেনই বা লুঠের কথা আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা টের পেলেন না? ঘটনার সময়ে উপস্থিত আফজলের আত্মীয় রহমান খান বলেন, ‘‘চেঁচামেচি করলে ওরা গুলি করে দেবে বলছিল। তাই আমরা টুঁ শব্দ করিনি।’’ আগের দিনের আতঙ্ক এ দিন দুপুর পর্যন্ত কাটেনি ওয়াহিদের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মাথায় বন্দুক ধরেছিল ওরা। হুমকি দিয়েছিল, চিৎকার করলে গুলি করে মেরে দেবে। তাই আমরা চিৎকার করিনি।’’

পুলিশের সন্দেহ, আফজলের ঘরে যে নগদ হাজার হাজার টাকা থাকে, তা দুষ্কৃতীরা জানত। ফলে এই ঘটনার পিছনে পরিচিত কারও হাতই রয়েছে। চাঁদনি এলাকায় ওই পাঁচতলায় উঠে রাত ন’টায় ডাকাতি করার জন্য আগেভাগে ‘রেইকি’ও করা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাস দেড়েক আগে বিহারের বাসিন্দা আফতাব আহমেদ নামে এক যুবককে রাঁধুনির কাজে নিয়োগ করেছিলেন আফজল। সেই রাঁধুনি শুক্রবার সন্ধ্যায় জাভেদ নামে তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে আসেন। ওই যুবককে আগে কোনও দিন দেখেননি বলে দাবি করেছেন আফজল। পুলিশ সূত্রের খবর, আফতাব ও জাভেদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও সূত্র মেলেনি বলেই পুলিশের দাবি। এ দিন আফজল, ওয়াহিদ-সহ বাকিদের লালবাজারে নিয়ে গিয়ে কথা বলেন গোয়েন্দারা।

চাঁদনি চকের মতো জমজমাট এলাকায় এমন লুঠের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এমন এলাকায় কেন সিসিটিভি নেই? বস্তুত, রাজীব কুমার পুলিশ কমিশনারের পদে বসার পরে ঢাকঢোল পিটিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি বসানোর কথা ঘোষণা করেছিল লালবাজার। তার পরেও চাঁদনি চকের মতো এলাকায় সিসিটিভি কই? পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, চাঁদনি চক এলাকায় সিসিটিভি বসানোর কাজ চলছে। কিছু কিছু এলাকায় তা বসেও গিয়েছে। বাকি এলাকাগুলিতেও সিসিটিভি বসাতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন