শুধু একটি কাগজের সার্টিফিকেট। তারই মূল্য ১০০ টাকা। অভিযোগ, পুর-আইনে যে মূল্য ধার্য করা আছে, দক্ষিণ দমদম পুরসভায় তার চেয়েও ১০০ টাকা বেশি মূল্য নেওয়া হচ্ছে মিউটেশনের জন্য।
পুরসভা সূত্রে খবর, নিয়মে রয়েছে মিউটেশনের সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ মূল্য ২০০। কিন্তু দক্ষিণ দমদম পুরসভা শুধুমাত্র মিউটেশন সার্টিফিকেটের জন্যই ১০০ টাকা দাম ধার্য করেছে। তাই সেখানে নতুন মিউটেশন মূল্য ৩০০ টাকা। যা কলকাতা পুরসভার মিউটেশন মূল্যের চেয়েও বেশি।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানের অবশ্য ব্যাখ্যা, সিপিএমের আমলে মিউটেশনের সময় ফ্ল্যাট বা বাড়ির মোট দামের ১ শতাংশ নেওয়া হত ‘স্ক্রুটিনি ফি’ হিসেবে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশ মেনে সেই ‘স্ক্রুটিনি ফি’ তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ স্বেচ্ছায় ১০০ টাকা সার্টিফিকেট-সহ ৩০০ টাকা দিয়ে মিউটেশন করছেন। চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘মিউটেশনের সময়ে নাগরিকদের কয়েক হাজার টাকা জমা দিতে হত পুরসভায়। যার জেরে প্রচুর আবাসিক মিউটেশন করাতেন না। ফলে পুর-কর নির্ধারণ করতে পারত না। পুরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হত।’’
উল্লেখ্য তৃণমূল পরিচালিত আগের বোর্ডেও ওই ১ শতাংশ হারে ‘স্ক্রুটিনি ফি’ নেওয়া হয়েছিল। পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ‘স্ক্রুটিনি ফি’ থেকে তবু কিছু টাকা পুরসভার কোষাগারে আসত। আচমকা মিউটেশন মূল্য কমিয়ে দেওয়ায় পুরসভার আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়বে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বর্তমানে প্রচুর বকেয়া কর আসছে। কিন্তু সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে তখন পুরসভাকে নিজের আয় নিয়ে ভাবতে হবে।’’ এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘৩০০ টাকায় মিউটেশন করানো হলেও ঘাটতি টাকা অন্য উপায়ে নাগরিকদের থেকে তুলতে হবে। না হলে পুরসভা চালাতে সমস্যা হবে।’’
পুরসভার আর্থিক ক্ষতি যে শেষ পর্যন্ত নাগরিকদের থেকেই উসুল করা হবে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জলের নতুন ফেরুলের মূল্য বাড়ানো হবে। নাগরিক পরিষেবার অন্য খাতের মূল্যবৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। কারণ এক ধাক্কায় ‘স্ক্রুটিনি ফি’ কমিয়ে দেওয়ায় পুরসভার হিসেবে বছরে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে পুরসভার।
এলাকার নাগরিকদের অনেকে এমনও জানাচ্ছেন, যে ১০০ টাকা পুর-আইনের নির্ধারিত মূল্যের বাইরে নিয়ে বেআইনি করছে দক্ষিণ দমদম পুরবোর্ড। একই সঙ্গে এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ যে ‘স্ক্রুটিনি ফি’ তবু ঘরের মাপের উপরে নির্ভর করে ধার্য করা হত। কিন্তু ৩০০ টাকা মূল্যে মিউটেশন করতে হবে সকলকেই। ফলে যিনি বিত্তশালী তার কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় এমন অনেক ওয়ার্ড রয়েছে যেখানে অত্যন্ত নিম্নবিত্তের মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও সুরাহা হল না। যদিও পুর-আইন অনুযায়ী মিউটেশনের মূল্যের বিভিন্ন স্তর রয়েছে।