প্লাস্টিকের আড়ালে ওত পেতে বিপদ

বিপদের উৎস হিসেবে তারা যেন একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছে সর্বক্ষণ! শহরের বাজারগুলির ভিতরের অবস্থা যতটা বিপজ্জনক, বাইরের অবস্থাও ততটাই। ভিতরের জতুগৃহকে যেন হেলায় হারিয়ে দেবে বাইরের প্লাস্টিকের আচ্ছাদন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

হাতিবাগানে প্লাস্টিকের আড়ালেই চলছে ব্যবসা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বিপদের উৎস হিসেবে তারা যেন একে অপরকে টেক্কা দিচ্ছে সর্বক্ষণ! শহরের বাজারগুলির ভিতরের অবস্থা যতটা বিপজ্জনক, বাইরের অবস্থাও ততটাই। ভিতরের জতুগৃহকে যেন হেলায় হারিয়ে দেবে বাইরের প্লাস্টিকের আচ্ছাদন। বাগড়ি মার্কেট-কাণ্ডের পরে এখন বাজার লাগোয়া ফুটপাতের এই পরিস্থিতি নিয়েই চিন্তায় ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। প্রসঙ্গত, ফুটপাতের ডালা থেকেই বাগড়ি মার্কেটে আগুন লেগেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। ওই সমস্ত ডালাতেও প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক এবং দাহ্যবস্তু মজুত ছিল।

Advertisement

যদিও ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যদের অভিযোগ, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প পথের প্রস্তাব দিলেও প্রশাসন তা কাজে লাগায় না। এমনকি, ওই প্রস্তাব পুরসভা এবং স্থানীয় নেতাদের কাছে একাধিক বার পাঠানো হলেও ফেলে রাখা হয়। বাজার কমিটির সভাপতি রঞ্জন রায় বললেন, ‘‘বাজারের বাইরের প্লাস্টিক থেকে আগুন লেগে পুড়ে মরার আগে দ্রুত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। এখনও সময় আছে!’’

কী সেই বিকল্প ব্যবস্থা? রঞ্জনবাবু জানান, ২০১২ সালে হাতিবাগান বাজারে আগুন লাগার প্রেক্ষিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে গভীর নলকূপ বসানোর পাশাপাশি বাজারের বাইরের ফুটপাত থেকে প্লাস্টিকের আচ্ছাদন সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলা হয়। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের আচ্ছাদন তুলে দিয়ে লোহার কাঠামো করে হকারদের বসার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়। তার পিছনে গ্লো-সাইন বোর্ডে পুরসভা বিজ্ঞাপনও দিতে পারত। এতে যা আয় হত, তা পুরসভা নিত। আর প্লাস্টিক থেকে আগুন লেগে বিপদ ঘটার আশঙ্কাও কমে যেত।’’ কাজ হল না কেন? বাজার কমিটির দাবি, মানিকতলা কেন্দ্রের বিধায়ক সাধন পাণ্ডে ও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি থাকলেও পুরসভা ওই প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়। ফলে কাজ আর এগোয়নি। এখন প্লাস্টিক-জটেই দিন কাটছে হাতিবাগান বাজারের।

Advertisement

একই রকম দুর্বিষহ অবস্থা শ্যামবাজার, মানিকতলা ও বাগমারি বাজারের। সর্বত্রই ফুটপাত জুড়ে বসা দোকানের উপরে প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনি রয়েছে। এমনকি, বাজার বন্ধ থাকাকালীন ডালা ঢেকে রাখতেও ব্যবহার হয় প্লাস্টিকের। এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের থেকে ভাল জিনিস নেই। জল থেকে বাঁচায়, সব ঢেকেও রাখা যায়।’’ কিন্তু, এ যে চরম দাহ্য? উত্তর দিতে পারেননি ওই ব্যবসায়ী। শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটের ভয়াবহ আগুনের স্মৃতি এখনও দগদগে ব্যবসায়ীদের মনে। বাজারের ভিতরে অগ্নিনির্বাপণের ভাল ব্যবস্থা রাখা হলেও বাইরের পরিস্থিতির বদল হয়নি। বাজার লাগোয়া ফুটপাতেই একাধিক কাগজের দোকান। প্লাস্টিকের থালা, প্লেট বিক্রি হচ্ছে বেশ কিছু দোকানে। প্রতিটি দোকানেরই চতুর্দিকে প্লাস্টিকের ছাউনি। ‘সূর্য সেন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি’র সভাপতি শিবপদ ঘোষ বললেন, ‘‘ধূমপান করে কেউ ওই প্লাস্টিকে ফেললে কী হতে পারে ভাবুন! কাকে বলব? কেউ শোনার নেই।’’

দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই বসেন বাজারের বাইরে প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বিপদ ঘটার হলে যে ভাবেই হোক ঘটবে। প্লাস্টিক ছে়ড়ে দেওয়ার উপায় নেই।’’ ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ভানুদেব বিশ্বাস বললেন, ‘‘প্রশাসন অন্য কোনও পথ বলুক। সেটাই মেনে নেব।’’

ব্যবসায়ীদের তরফে বিকল্প প্রস্তাব থাকলেও তা মানা হয় না কেন? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখছি। যদি সম্ভব হয়, নতুন ব্যবস্থা দ্রুত চালু হয়ে যাবে।’’ এত দিনেও কেন তা হয়নি, তা অবশ্য জানাতে পারেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন