Bansdroni

প্রশিক্ষণে লাভ কী হল, সামান্য পাতকুয়ো মিস্ত্রি যা পারেন ওঁরা তাতে অপারগ!

একটা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিপর্যয়ের পর উদ্ধার কাজে কতটা ‘প্রস্তুত’ দমকল ও কলকাতা পুলিশ!

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:৩০
Share:

কুয়োয় তখন চলছে উদ্ধারকাজ। ইনসেটে মৃত যুবক সম্রাট সরকার ওরফে বাপি। নিজস্ব চিত্র

একটা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বিপর্যয়ের পর উদ্ধার কাজে কতটা ‘প্রস্তুত’ দমকল ও কলকাতা পুলিশ! রিজেন্ট পার্কের বাসিন্দা বছর তিরিশের যুবক সম্রাট সরকার ওরফে বাপিকে পাতকুয়ো থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছে তারা। দফায় দফায় ডুবুরি নামিয়েও কোনও কাজ হয়নি। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কিছুটা লড়াই করলেও, শেষ পর্যন্ত এক পাতকুয়ো মিস্ত্রির শরণাপন্ন হতে হয় পুলিশকে। তার পর ওই যুবককে উদ্ধার করা যায়। তবে, তখন আর বেঁচে ছিলেন না বাপি।

Advertisement

শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটে থেকে শনিবার সকাল ন’টা পর্যন্ত চলেছে উদ্ধারকাজ। ৫০ ফুট গভীর পাতকুয়ো থেকে এক যুবককে উদ্ধার করতে কেন ২০ ঘণ্টা লেগে গেল? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার বাসিন্দারা, ক্ষুব্ধ যুবকের পরিবার। যাঁরা এই উদ্ধারকাজের প্রায় গোটাটারই সাক্ষী ছিলেন, তাঁদেরও প্রশ্ন, কোনও ঘটনা ঘটলে কি এ ভাবেই মৃত্যুর মুখ দেখতে হবে? কোথায় গেল কলকাতা পুলিশের প্রশিক্ষিত বাহিনী? কেন বাপিকে উদ্ধার করতে পারলেন না দমকল কর্মীরা? চার বার ডুবুরি নামিয়েও কেন কোনও কাজ হল না?

পাতকুয়ো মিস্ত্রি মেঘনাদ সর্দারকে কলকাতা পুলিশে সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। তাঁর চাকরি পাওয়ার কথা শুনে ওই এলাকার বাসিন্দারা যদিও খুশি। তবে তাঁদের মতে, মেঘনাদ পাতকুয়ো মিস্ত্রি ঠিকই, কিন্তু তিনি তো আর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মতো প্রশিক্ষণ পাননি। ডুবুরি, দমকলকর্মী, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা যে ভাবে প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন, তাঁদেরই তো ওই যুবককে উদ্ধার করা কথা ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: দমকল-ডুবুরি ব্যর্থ, ২০ ঘণ্টা পর বাঁশদ্রোণীর যুবকের দেহ উদ্ধার করলেন পাতকুয়ো মিস্ত্রি​

কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলছেন, “প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলেও, বিশেষ পরিস্থিতিতে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। উদ্ধারকাজে পাম্প এনে জল কমানো হয়েছে। ডুবুরি নামানোও হয়। কিন্তু ওই যুবককে পাতকুয়ো থেকে বার করতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই যাঁরা পাতকুয়ো তৈরি করেন, তাঁদের এক জনকে নামানো হয়েছিল।” ওই অফিসারের মতে, মেঘনাদ সে জন্য চাকরিও পেয়েছেন। তবে এই যুক্তি মানতে চাইছেন না অনেকেই। বাপির এক আত্মীয়ের বক্তব্য, ‘‘দমকল, পুলিশ কেউ তা পারল না। এক জন পাতকুয়ো মিস্ত্রিকে আগে নামানো হলে হয়তো বাঁচানো যেত ওকে। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কারণেই বাপিকে মারা যেতে হল।’’

এই সেই কুয়ো।— নিজস্ব চিত্র

এ দিন সকাল আটটা নাগাদ নামানো হয়েছিল মেঘনাদকে। কনকনে ঠান্ডা জলে নেমে তিনি এক ঘণ্টার মধ্যেই বাপির দেহের হদিশ পান। তার পর মাস্ক পরে দড়ির সাহায্যে বাপির পায়ে দড়ি বেঁধে দেন। কপিকলের মাধ্যমে পাতকুয়ো থেকে উদ্ধার করা হয় বাপির দেহ। এই কাজটি করতে গিয়ে প্রায় ১৯ ঘণ্টা কাটিয়ে দিলেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই বাহিনীর কর্মীরা!

আরও পড়ুন: ‘এতদিন চুপ ছিলাম, আর নয়’, মৌসুমির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে আদালতে যাচ্ছেন জামাই ডিকি

চাকরি পেয়ে খুশি মেঘনাদ। তিনি এখন নথিপত্র নিয়ে ছোটাছুটিও শুরু করে দিয়েছেন। খুশি তাঁর পরিবারও। যে কাজ দমকল-পুলিশ পারেনি, মেঘনাদ তা করে দেখিয়েছে। এ দিন মেঘনাদ বলেন, ‘‘বাপিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলে খুবই ভাল লাগত। কিন্তু, মানুষের হাতে তো সবটা থাকে না। চাকরি পাওয়ার খবরে আমার পরিবার খুশি। দুই ছেলে রয়েছে। স্কুলে পড়ে। একটা চাকরি তো হল। পরিবারটা বাঁচল।” পাতকুয়োয় পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন মৃগী রোগে আক্রান্ত বাপি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও, তাঁকে কেন উদ্ধার করা যাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে দু’বার গিয়েছিলেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রীর জন্যেই তাঁর চাকরিটা হয়েছে বলে জানান মেঘনাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন