বাইরে তালা, ঘরের ভিতরে মৃত প্রৌঢ়

সোমবার এমনই একটি বাড়ির দোতলা থেকে এক ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের নাম ভবরঞ্জন ভাওয়াল (৫৫)। মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, দমদমের খলিসাকোটায় ওই বাড়িটি সম্প্রতি ভবরঞ্জনবাবু কিনেছিলেন। ভবরঞ্জনবাবু আদতে ভবানীপুরের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০৮
Share:

এই বাড়ির দোতলাতে মেলে মৃতদেহ। নিজস্ব চিত্র

বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলছে। দরজা-জানলা বন্ধ, আলো-পাখা নেভানো।

Advertisement

সোমবার এমনই একটি বাড়ির দোতলা থেকে এক ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের নাম ভবরঞ্জন ভাওয়াল (৫৫)। মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন, দমদমের খলিসাকোটায় ওই বাড়িটি সম্প্রতি ভবরঞ্জনবাবু কিনেছিলেন। ভবরঞ্জনবাবু আদতে ভবানীপুরের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমের এই বাড়িটিতে মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করছিলেন তিনি। এই রবিবারেও সেখানে যান ভবরঞ্জনবাবু। কিন্তু সে দিন বিকেলের পর থেকে অনেক চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের লোকেরা। ফোন বেজেই যেতে থাকে। পরে সোমবার সকালে ভবরঞ্জনবাবুর আত্মীয়েরা দমদমের ওই বাড়িতে গিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান ভবরঞ্জনবাবুকে।

Advertisement

এই ঘটনায় পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে বেশ অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এই মৃত্যু।

আত্মীয়দের একাংশের দাবি, ছ’মাস আগে খলিসাকোটায় কেনা ওই পুরনো বাড়িতে ইদানীং মেরামতির কাজ চলছিল। সেখানে গত ৩০ নভেম্বর গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠানও হয়। প্রতি রবিবার মেরামতির কাজ দেখতে যেতেন ভবরঞ্জনবাবু। মৃত ব্যবসায়ীর ছেলে অমিত এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে বাবার সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল। তার পর থেকে কোনও যোগাযোগ হয়নি।’’ ফোনে সাড়া না পেয়ে দমদমেই তাঁদের অন্য এক আত্মীয়কে ফোনে ঘটনাটি জানানো হয়।

সেই আত্মীয়েরা সোমবার সকালে খলিসাকোটার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। তাঁদের কাছেই ডুপ্লিকেট চাবি ছিল। তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখা যায়, ভবরঞ্জনবাবুর দেহ মেঝেতে পড়ে। ঘর থেকে দুটো কাচের গ্লাস মিলেছে। এ ছাড়াও ঘরে কৌটো ছিল, যার মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ছিল।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, রবিবার ভবরঞ্জন যদি একাই এই বাড়িতে ছিলেন, তা হলে সদর দরজা বাইরে থেকে কে বন্ধ করলেন? যে তালা ভবরঞ্জনবাবু নিয়মিত ব্যবহার করতেন, সেই তালাটাই ঝুলছিল বাইরে। যে কারণে, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তা খোলা গিয়েছে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, ঘরে দুটো গ্লাস কেন ছিল? তবে কি ভবরঞ্জনবাবু ছাড়াও রবিবার অন্য কেউ ছিলেন ওই বাড়িতে? এমন কেউ, যিনি ভবরঞ্জনবাবুর পরিচিত?

তৃতীয় প্রশ্ন, সন্ধ্যার পরে ভবরঞ্জনবাবু ঘরে একা থাকার সময়ে আচমকা অসুস্থ হয়ে যদি মারা গিয়ে থাকেন, তা হলেও ঘরে আলো জ্বলার কথা। কিন্তু সোমবার আত্মীয়েরা ঢুকে দেখেন, আলো-পাখা কিছুই জ্বলছে না। ঘরে গিয়ে দেখা গিয়েছে ব্যবসায়ীর সারা দেহ শক্ত হয়ে গিয়েছে।

আত্মীয়দের সন্দেহ, ঘটনার সময়ে অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন ওই ঘরে। ভবরঞ্জনবাবুকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে আলাদা কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি পরিবারের তরফে। পুলিশ জানিয়েছে, সব দিক থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিনই পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। ময়না-তদন্তে পরে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement