জলাধারে তলিয়ে মৃত্যু বালকের

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০০:২৯
Share:

সেই জলাধার। (ইনসেটে) আব্দুল খান। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বহুতল নির্মাণ করা হবে বলে খুঁড়ে রাখা হয়েছিল জলাধার। খেলতে গিয়ে সেই জলাধারে পড়েই মৃত্যু হল আব্দুল খান (৮) নামে একটি ছেলের। মঙ্গলবার সকালে পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন কলিন লেনের ঘটনা।

Advertisement

বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পরেও যে ভাবে জমি না ঘিরে এবং সেখানে গভীর জলাধার তৈরি করে ফেলে রাখা হচ্ছে, তা যে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা। এই ধরনের নির্মীয়মাণ বহুতলের চারপাশে কেন পাঁচিল তোলা হবে না, পুরসভাই বা সে দিকে কেন নজর দেবে না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

অপরিসর কলিন লেন এলাকায় কোনও খেলার মাঠ নেই। তাই বহুতল নির্মাণের জন্য যখন কোনও পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, তখন সেটাই অস্থায়ী খেলার মাঠে পরিণত হয় স্থানীয় বাচ্চাদের কাছে। এমনকী নির্মাণ শুরুর পরেও ওই জায়গাকেই খেলার জন্য বেছে নেয় তারা। আর সেখানেই বিপজ্জনক ভাবে খোলা অবস্থায় পড়ে থাকে গভীর জলাধার।

Advertisement

এ দিন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই পাড়ার বাচ্চারা ১২ নম্বর কলিন লেনের ওই জমিতে খেলতে যায়। সেখানে যে উন্মুক্ত জলাধারটি রয়েছে তা ফুট ছয়েক গভীর। বহুতলের নির্মাণ এখনও শুরু হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওখানে যে পুরনো বাড়িটি ছিল বছর চারেক আগে তা ভেঙে ফেলার পরেও জায়গাটিতে কোনও বাড়ি তৈরি করা হয়নি। শুধু জলাধারটি খুঁড়ে, জল ভরে ফেলে রাখা হয়েছে। ওই জমিটিতে কোনও নিরাপত্তা কর্মীও নেই। সেখানে বিদ্যুতের মিটার বক্সটিও খোলা থাকে বলে বাসিন্দারা জানান।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল এগারোটা নাগাদ স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছিল আব্দুল। সে স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। পরিবারের সদস্যেরা জানান, ফেরার পর সে খেলতে বেরিয়ে যায়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল আব্দুলের। কিন্তু সে না ফেরায় তাকে খুঁজতে বের হন তার বাবা-মা।

আব্দুলের মা ইয়াসমিন বেগম এ দিন বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি ওই জলাধারের পাশে ছেলের জুতো পড়ে রয়েছে। তখনই আমি চমকে উঠি।’’ ততক্ষণে ইয়াসমিনদের পিছন পিছন মহল্লার কয়েক জনও পৌঁছে যান সেখানে। সাহবুদ্দিন আহমেদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রথমে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। তার পরে ছেলের খোঁজে জলাধারে নেমে যান আব্দুলের বাবা জামিল খান। দেখা যায় আব্দুল ওই জলাধারে তলিয়ে গিয়েছে। জামিল ছেলেকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে সোজা এসএসকেএমে নিয়ে যান। এর আধ ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে আব্দুল আর বেঁচে নেই।’’ ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই জ্ঞান হারান ইয়াসমিন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ ও পুরসভা একটু সতর্ক হলে এই ভাবে চলে যেতে হত না আব্দুলকে। কলিন লেনের যে জায়গায় এই ফাঁকা জমিটি পড়ে রয়েছে সেটি পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তৃণমূলের সানা আহমেদের সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। আব্দুলের বাড়ি ওই জমিটির উল্টো দিকের সরু গলির শেষ প্রান্তে। সেটি আবার পুরসভার ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সুস্মিতা ভট্টাচার্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেটির মৃত্যুর খবর পেয়ে ওর বাড়িতে যাই। পুরসভাকেও বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।’’ ওই নির্মীয়মাণ বাড়িটি সুস্মিতার ওয়ার্ডের অন্তর্গত না হলেও তিনি বলেন, ‘‘ওই বাড়িটিতে যে ভাবে কাজ হচ্ছে তা অন্যায়।’’

পুলিশ জানিয়েছে, বহুতল নির্মাণের জন্য ওই জমিটি কিনে যাঁরা এ ভাবে ফেলে রেখেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন