ভূগর্ভে আর্সেনিক জেনেও বসছে নলকূপ

কাউন্সিলরদের অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘পুরসভার নথিতে আমার ওয়ার্ড আর্সেনিকপ্রবণ নয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৩
Share:

১০১ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার নতুন নলকূপ। নিজস্ব চিত্র

আন্ত্রিক এড়াতে এ বার যেন আর্সেনিক-দূষণকে ‘আমন্ত্রণ’ জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভা!

Advertisement

মাস দুয়েক আগে পুরসভার সংযোজিত এলাকায় আন্ত্রিক ছড়িয়েছিল মারাত্মক ভাবে। আর সেই আন্ত্রিকের মূলে ছিল পুরসভার সরবরাহ করা জল। এর পরে এলাকার মানুষ পুরসভার জলে আর ভরসা রাখতে পারছেন না। তাই বিকল্প হিসেবে নলকূপ বসাচ্ছে পুরসভা।

যেমন, ই এম বাইপাস সংলগ্ন ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে বসানো হয়েছে এমনই দু’টি নলকূপ। ওই ওয়ার্ডে সম্প্রতি আন্ত্রিক ছড়িয়েছিল। সংযোজিত এলাকার আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে সম্প্রতি নলকূপ বসানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমীক্ষায় পুরসভার ওই সব এলাকায় নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক ধরা পড়েছে। সেখানে নলকূপ এবং গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ না হলে আর্সেনিক-দূষণ রোখা যাবে না বলেও মত দিয়েছেন গবেষকেরা।

Advertisement

কাউন্সিলরদের অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘পুরসভার নথিতে আমার ওয়ার্ড আর্সেনিকপ্রবণ নয়।’’

তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর একটি সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকা আর্সেনিকপ্রবণ। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘কেমোস্ফিয়ার’-এ প্রকাশিত (অগস্ট ২০১৭) যাদবপুরের ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কলকাতা পুরসভার ৭৭টি ওয়ার্ডের নলকূপের জলে সহনমাত্রার (প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রাম) বেশি আর্সেনিক মিলেছে। বাইপাস সংলগ্ন ৯৯ এবং ১০৫ ছাড়া বাকি সব ক’টি ওয়ার্ডকেই আর্সেনিকপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে।

কলকাতা শহরের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের বিপজ্জনক উপস্থিতির কারণে নলকূপ এবং গভীর নলকূপে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুরসভা। কিন্তু তা সত্ত্বেও পুরসভা নিজেই কেন নলকূপ বসাচ্ছে? এক পুরকর্তার ব্যাখ্যা, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামো এখনও পুরোপুরি তৈরি করা যায়নি। তা নিয়ে নিরন্তর কাজ করা হচ্ছে। সেই কাজ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নলকূপ বসানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকছে না। পুরকর্তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় নলকূপ বসানোর আগে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়। আর্সেনিকমুক্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নলকূপ বসানো হয়। পুরসভার জল দফতরের কর্মীরাই কিন্তু এই দাবি মানতে চাইছেন না।

এক পদস্থ পুরকর্তা আবার দায় চাপিয়েছেন এক শ্রেণির প্রমোটারের ঘাড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নলকূপ বসানো নিয়ন্ত্রণ করলে কী হবে, বহুতল বাড়িগুলিতে গভীর নলকূপেই জল তোলা হচ্ছে নিয়মিত। এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’’

পুরকর্তাদের কেউ কেউ আবার সরাসরি দায় চাপিয়েছেন প্রশাসনের উপরে। এক পুরকর্তার দাবি, বৃষ্টির জলকে বাধ্যতামূলক ব্যবহারের যে নিয়ম রাজ্য সরকার তৈরি করেছিল, তা মানা হলে শহরের বহুতলগুলিতে গভীর নলকূপের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কলকাতায় বছরে গড়ে ১৮০০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়। সেই বৃষ্টির জল পুরোটাই নষ্ট হয়। রাজ্য সরকার ঠিক করেছিল, কোনও আবাসনে একশোটির বেশি ফ্ল্যাট থাকলে কিংবা আবাসনের এলাকা ৬০ হাজার বর্গফুটের বেশি হলে সেখানে বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে ব্যবহার করার প্রযুক্তি রাখতে হবে। সেই নিয়ম প্রযোজ্য কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রেও। কিন্তু ওই নিয়ম পালনে পুরসভা উৎসাহী নয় বলে অভিযোগ করেছেন পুরকর্তাদের একাংশই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন