মানস দাস। নিজস্ব চিত্র।
ফের ‘ডেঙ্গি’তে মৃত্যু শহরতলিতে। সোমবার রাতে পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিংহোমে মারা গিয়েছেন উত্তর দমদমের বিশরপাড়ার নবজীবন কলোনির বাসিন্দা মানস দাস (৪৭)। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেলিওর ইন আ কেস অব ডেঙ্গি এনএস ওয়ান পজিটিভ’। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন মৃতের পরিজনেরা।
মানসবাবুর স্ত্রী সুপর্ণা দাস জানান, উচ্চ রক্তচাপ থাকায় গত তিন বছর ধরে এক চিকিৎসককে দেখাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। বৃহস্পতিবার মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে সেই চিকিৎসকের পরামর্শে ওই নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই রক্তপরীক্ষায় সংক্রমণ ধরা পড়ে। রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পর দিন তাঁকে আইসিইউয়ে স্থানান্তরিত করানো হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় মানসবাবুর। সুপর্ণার কথায়, ‘‘চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, সংক্রমণের জেরে জন্ডিসের পাশাপাশি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নার্সিংহোমে তার কোনও চিকিৎসাই হয়নি। সোমবার সকাল থেকে রোগী আইসিইউয়ে ভর্তি হলেও বিকেলের আগে চিকিৎসক দেখতে এলেন না!’’ মৃতের ভাগ্নী প্রিয়ঙ্কা ঘোষও বলেন, ‘‘রোগীকে ফেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে দিল।’’
যাঁর তত্ত্বাবধানে নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন মানসবাবু, সেই চিকিৎসক অমিত গুপ্তের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘শরীরের ভিতরে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ নিয়ে মানস নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। পর দিন থেকে পেটে জল জমতে শুরু করে। রক্তচাপ কম থাকায় ডায়ালিসিস করা যায়নি। এরই মধ্যে নানা অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। রোগীর অবস্থা যে ভাল নয় তা প্রথমেই বলা হয়। এনএস ওয়ান ধরা পড়ার পরই এই সমস্যা দেখা দেয়।’’
স্বাস্থ্যভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে পরিবারের সদস্যদের কোনও অভিযোগ থাকলে তা স্বাস্থ্যভবন বা স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে জানাতে পারেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘নার্সিংহোমের পাঠানো রিপোর্ট যাচাই করার পরই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হব। ডেঙ্গির কারণেই মৃত্যু, এখনই তা বলা যাচ্ছে না।’’ উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীলও বলেন, ‘‘মৃতের আরও অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল। তা ছাড়া, ব্যবসার কাজে দিনের বেশিরভাগ সময় উনি জানবাজারে কাটাতেন।’’
চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি এলাকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মৃতের দাদা তাপস দাস। কলাগাছের পাতার ফাঁকে জমা জল যে মশার বংশবিস্তারে আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, তা বারবার বলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু মৃতের বাড়ির পিছনে কলাগাছের পাশাপাশি ফাঁকা জায়গায় পড়ে রয়েছে আবর্জনা। এ দিনও সেই জমিতে আশপাশের বাসিন্দারা জঞ্জাল ফেলে। মানসবাবুর সাত বছরের মেয়ে সুমেধা দাসের নালিশ, ‘‘বাড়ির পিছনের জঙ্গলটা ক’দিন আগে পরিষ্কার করা হল। আবার সবাই ময়লা ফেলছে। কেউ কথা শোনে না।’’