Dengue

ঘরে ঘরে জ্বর কেন, পুরসভা বলছে রহস্য

পাড়ার একটি নার্সিংহোমেও রোগীর থিকথিকে ভিড়। অধিকাংশেরই স্যালাইন চলছে। নার্সিংহোমের এক কর্মী জানালেন, যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, প্রায় সকলেই জ্বরে ভুগছেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৫
Share:

দিন দু’য়েক আগেই জ্বরে মারা গিয়েছেন তুলি নস্কর নামে এক গৃহবধূ। এলাকার ঘরে ঘরে জ্বর! কোনও কোনও বাড়িতে পরিবারের একাধিক ব্যক্তি জ্বরে ভুগছেন। অথচ পুর পরিষেবার জন্য চাতক পাখির মতো বসে রয়েছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

রবিবার বিধাননগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর ঘুরে দেখা গেল এমনই ছবি। পুরসভার এই গা-ছাড়া মনোভাবে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। বরো অফিসের কাছেই মুদির দোকান গোপাল মণ্ডলের। তিনি জানালেন, তাঁর স্ত্রী ও বাবার ডেঙ্গি হয়ে গিয়েছে। ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের বাকিরা। পুর পরিসেবার জন্য অপেক্ষা না করে তারা নিজেরাই এলাকা সাফ করতে নেমেছেন। মশা নিরোধক মলম ব্যবহার করে বা ধূপ জ্বালিয়েও আতঙ্ক কমছে না। খালি মনে হচ্ছে, এই বুঝি আরও কেউ জ্বরে পড়বেন। গোপালের কথায়, ‘‘শুধু আমাদের বাড়িই নয় এলাকায় এমন কোনও বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে অন্তত এক জনের ডেঙ্গি হয়নি।’’ একই কথা বললেন আর এক বাসিন্দা অমিতকুমার মণ্ডল। তাঁদের বাড়ির চার জনের জ্বর। অমিতবাবুর পাশের বাড়িতে তিন জন জ্বরে ভুগছেন, এক জন হাসপাতালে ভর্তি।

পাড়ার একটি নার্সিংহোমেও রোগীর থিকথিকে ভিড়। অধিকাংশেরই স্যালাইন চলছে। নার্সিংহোমের এক কর্মী জানালেন, যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, প্রায় সকলেই জ্বরে ভুগছেন।

Advertisement

বাসিন্দাদের একাংশ স্বীকার করছেন, পুরসভার তরফে মাঝেমধ্যেই ব্লিচিং ছড়ানো হয়। কিন্তু তা হলে মশা কমছে না কেন? স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এই ব্লিচিংয়ের মানই সন্দেহজনক। তাতে কোনও ঝাঁঝ নেই। তাঁরা আরও অভিযোগ করছেন, এলাকার অন্যতম সমস্যা ছোট ছোট জলাশয়। সেগুলি এখন কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভর্তি। এক বাসিন্দা মোনালিসা সিংহ বলেন, ‘‘আমার বাড়ির পাশের পুকুর জুলাই মাসে শেষ বার সাফ করা হয়েছিল। এখন আবার সেখানে আবর্জনার স্তূপ। মশার উৎপাতে দুপুরের পর থেকে ধারেকাছে যাওয়া যায় না। পুরসভা শুধু ব্লিচিং ছড়িয়েই দায় সারে।’’

আরও পড়ুন: পাল্টে যাচ্ছে কি ম্যালেরিয়ার জীবাণুও, প্রশ্ন

শুধু পুরসভার উদ্যোগের অভাবই নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর তথা ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোরো চেয়ারম্যান মণীশ মুখোপাধ্যায়কে প্রয়োজনের সময়ে সবসময় পাওয়া যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমন বিপদের সময়ে তো কাউন্সিলরকে পাশে পাওয়া জরুরি। কিন্তু তিনি চেনা নম্বর ছাড়া বেশিরভাগ সময়েই ফোন ধরেন না।’’ ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, বরো অফিসের গা ছাড়া মনোভাব। কাউন্সিলর ফোন ধরছেন না। পুরকর্মীরা মর্জি মতো মশার ধোঁয়া, তেল বা ব্লিচিং ছড়াতে আসবেন। এই যদি পরিষেবার হাল হয়, তা হলে তাঁরা কোন ভরসায় দিন কাটাবেন?

বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা এলাকাবাসীর পাশে সব সময়ে আছি। নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য শিবিরও করা হচ্ছে।’’ কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন পাড়ার এত বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন? কেন কমছে না মশার দাপট? প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘এত চেষ্টা সত্ত্বেও কেন রোগের প্রকোপ কমছে না, সেটাই রহস্যের।’’

সেই রহস্য কবে কাটবে, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন