জ্বর গেলেও থেকে যাচ্ছে ডেঙ্গি-জীবাণু

রাতেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল ওই ডেঙ্গি রোগীকে। ভর্তি হওয়ার পরপরই কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোলো মুখ দিয়ে। শুধু ডেঙ্গি নয়, রীতিমতো হেমারেজিক ডেঙ্গি হয়েছে ওই ব্যক্তির। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে জানালেন, ‘‘আর কিছু পরে ভর্তি হলে আপনার জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারত।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৯:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মা ও মেয়ের জ্বর কমছে না। তাঁদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন দক্ষিণ দমদমের এক বাসিন্দা।

Advertisement

বহু দিন ধরে সংক্রামক রোগ ঘাঁটাঘাটি করছেন ওই চিকিৎসক। ওই বাসিন্দাকে দেখেই তাঁর সন্দেহ হওয়ায় জামা খুলে দেখাতে বলেন। দেখা যায়, গায়ে লাল দাগ। রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, ওই ব্যক্তির প্লেটলেট নেমে গিয়েছে ৫০ হাজারের নীচে। ডেঙ্গির অ্যান্টিবডিও রয়েছে রক্তে।

রাতেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল ওই ডেঙ্গি রোগীকে। ভর্তি হওয়ার পরপরই কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোলো মুখ দিয়ে। শুধু ডেঙ্গি নয়, রীতিমতো হেমারেজিক ডেঙ্গি হয়েছে ওই ব্যক্তির। কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে জানালেন, ‘‘আর কিছু পরে ভর্তি হলে আপনার জীবন সংশয় পর্যন্ত হতে পারত।’’

Advertisement

মা ও মেয়ের জ্বর হলেও, ওই ব্যক্তির জ্বর হল না কেন? ডেঙ্গির অন্যতম উপসর্গ বেশ কয়েক দিনের জ্বর। রোগীকে জিজ্ঞাসা করে চিকিৎসক জানতে পারলেন, ওই ব্যক্তির জ্বর চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। ওষুধের দোকানের পরামর্শে তিনি কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছেন। তাতে জ্বর কমেছে বটে, কিন্তু ডেঙ্গির জীবাণু নিঃশব্দে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: পাশে হাসপাতাল, কোলে ফিরল মেয়ে

হাসপাতালে বেশ কিছু দিন থাকার পরে বাড়ি ফিরেছেন ওই ব্যক্তি। জনে জনে এখন তিনি বলছেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রবণ এলাকায় বর্ষার সময়টায় জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। রক্ত পরীক্ষা ছাড়া কোনও মতেই ওষুধ খাওয়া মানা। আর অ্যান্টিবায়োটিক তো একেবারেই নিষিদ্ধ।’’

যে চিকিৎসক ওই ব্যক্তির চোখ দেখেই রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন তাঁর পরামর্শ, এখন নানা জীবাণু চারপাশে যে ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে রক্ত পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। জ্বর হলে বড়জোর প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। ‘‘আমরা অনেক সময়েই নিজে থেকেই চিকিৎসা করি এবং সেইমতো ওষুধ খাই। এতে বড় বিপদ ঘটতে পারে। যার ফল অনেক সময়ে মৃত্যুও হয়।’’

ডাক্তারির বইয়ে ডেঙ্গির যে সব উপসর্গের কথা বলা আছে, গত দু’-তিন বছরে তার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ওই উপসর্গ দেখে ডেঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলে ভুল হতে পারে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই জ্বর অনুভব করা যাচ্ছে না অথচ প্রচণ্ড পেট খারাপের সঙ্গে পেশীতে যন্ত্রণা হচ্ছে। এটাও ডেঙ্গির উপসর্গ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে প্রথম দিনেই প্লেটলেট হু হু করে কমে যাচ্ছে। রোগীর গায়ে লাল দাগ, প্রচণ্ড জ্বর কিন্তু ডেঙ্গি ধরা পড়ছে না।

এ ছাড়া অন্য উপসর্গও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পরে রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। তাই রক্ত পরীক্ষার উপরেই সর্বাধিক জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অ্যান্টিবায়োটিকের উপরে অধিক নির্ভরতাও বন্ধ করতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, কারণ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তা শরীরের পক্ষে বিষাক্ত হতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। ডেঙ্গির মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক শরীরকে আরও দুর্বল করে দেয়। রোগ আরও চেপে বসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন