বিধাননগর

ডেঙ্গির হানা কি এ বার খোদ মেয়রের ওয়ার্ডেও

ডেঙ্গি পিছু ছাড়ছে না বিধাননগরের। এ বার জ্বরের সংক্রমণ ঘটল খোদ মেয়রের বাসস্থান ডিএল ব্লকেই। সেই জ্বরে ডেঙ্গির লক্ষণ ছিল বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪২
Share:

মশা-নিধনে মোটরবোট নেমেছে বাগজোলা খালে। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি পিছু ছাড়ছে না বিধাননগরের। এ বার জ্বরের সংক্রমণ ঘটল খোদ মেয়রের বাসস্থান ডিএল ব্লকেই। সেই জ্বরে ডেঙ্গির লক্ষণ ছিল বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

ডিএল ব্লকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতেন বাংলা বিভাগের ছাত্রী সৃজা ঘোষ। হস্টেল সুপার হাসি সরকার জানান, ৬ অগস্ট সৃজার জ্বর এসেছিল। পরের দিন তিনি জয়রামবাটিতে নিজের বাড়ি চলে যান। দু’দিন পরে হাসপাতালের পথে তাঁর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সৃজার মৃত্যুর খবর পৌঁছয় পুরসভায়। হস্টেল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগেও দু’জনের জ্বর হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। তাঁদের দাবি, হস্টেল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়। পুরকর্মীরা স্প্রে ও ধোঁয়া দিয়ে যান। রবীন্দ্রভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার দেবদত্ত রায় বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতেই ওই ছাত্রীর মৃত্যু কি না, নিশ্চিত নই।’’

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলটি বিধাননগর পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। স্থানীয় কাউন্সিলর সুধীর সাহা বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে আগে থেকেই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা হয়েছে।’’ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় জানান, ওই হস্টেলে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। সেখানে জীবাণু মেলেনি। তার পরেও জ্বরের সংক্রমণের খবর এসেছে। তাই আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পুর-প্রশাসনের একাংশের দাবি, হস্টেলের ছাত্রীরা বহু সময়ে বাইরে থাকেন। তাই সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করা কঠিন।

Advertisement

বিধাননগরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা তিন। মঙ্গলবার ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুলে দু’দফায় পরিদর্শন করেন পুরকর্মী থেকে কাউন্সিলর ও স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ। সূত্রের খবর, পুরসভার অনুমতি মেলায় আজ, বুধবার থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাকি শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হবে ১৬ অগস্ট। তবে এ দিনই স্থানীয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মল দত্ত পুরকর্মীদের নিয়ে ওই স্কুল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, কিছু জায়গায় এ দিন জীবাণুর সন্ধান মিললেও তা সাফ করা হয়েছে।

পাশাপাশি এ দিন মশা দমনে জগৎপুর থেকে লেকটাউন পর্যন্ত খালে মোটরচালিত বোট চালায় পুরসভা। মশার তেল স্প্রে করার পাশাপাশি কচুরিপানা সরানোর কাজও হয়। তবে পুরসভা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির দাবি করলেও দত্তাবাদ থেকে শুরু করে সংযুক্ত এলাকায় এখনও মশা তাড়ানোর কাজে তৎপরতা চোখে পড়েনি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের।

ডেঙ্গির আতঙ্কের মধ্যেই মঙ্গলবার বেলেঘাটা সরকার বাজারের লি কলিন্স স্কুলের অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, স্কুলের যত্রতত্র জমে রয়েছে জল, ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। প্রায় চারশো পড়ুয়াকে উন্মুক্ত কুয়োর জল পান করতে হয়। অভিযোগ, বারবার এই সব সমস্যার কথা জানালেও স্কুলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

লি কলিন্স সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মিশনারি স্কুল। এ দিন স্কুলে গিয়ে পাওয়া যায়নি স্কুল ও বোর্ডিংয়ের পরিবেশ দেখার দায়িত্বে থাকা দুই ম্যানেজার, রেভারেন্ড স্টিফেন সোরেন ও শর্মিলা সোরেনকে। প্রধান শিক্ষক সুদীপকুমার মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘আমাকে পড়াশোনা ছাড়া অন্য বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেননি।’’ তবে স্কুলের অন্যতম কর্ণধার রাজা ম্যাকি বলেন, ‘‘সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কলকাতার স্কুল পরিদর্শকের অফিস সূত্রের খবর, ডেঙ্গি ঠেকাতে শিক্ষা দফতরের নির্দেশে বিভিন্ন স্কুলে অভিযান চলছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘লি কলিন্স স্কুলের বিষয়টি জানতাম না। অবিলম্বে পদক্ষেপ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement