বিপদ জেনেও পরম্পরা ধরে রাখতে আকাশে উড়ল ফানুস

বিডন স্ট্রিটের ‘ভোলানাথ ধাম’-এর উঠোন জুড়ে এ দিন বিকেল থেকেই শোরগোল। পুরনো রীতি মেনে ওই বাড়ির কর্তা অজয় দত্ত এ বারও ফানুস ওড়াচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

আকাশপানে: বিডন স্ট্রিটের বাড়িতে ওড়ানো হচ্ছে ফানুস। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ‘বারণ’ রয়েছে। সতর্ক করেছে পুলিশও। কারণ, যে কোনও জায়গায় পড়ে গিয়ে আগুন লেগে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে সম্পর্কে তাঁরা জানেনও। তবু স্রেফ পরম্পরা ধরে রাখতেই কালীপুজোর দিনে ফানুস ওড়ে উত্তর কলকাতায়। পরম্পরা বজায় রাখার দায় না থাকলেও ফানুস ওড়ানোয় পিছিয়ে থাকে না দক্ষিণও। রবিবার বিকেলে শহরজুড়ে দেখা গেল সেই ছবিই।

Advertisement

বিডন স্ট্রিটের ‘ভোলানাথ ধাম’-এর উঠোন জুড়ে এ দিন বিকেল থেকেই শোরগোল। পুরনো রীতি মেনে ওই বাড়ির কর্তা অজয় দত্ত এ বারও ফানুস ওড়াচ্ছেন। পাঁচ বছরের নাতি অহর্ষি দত্তকে নিয়ে গোধূলির ফানুস উড়িয়ে তিনি জানালেন, আরও ১৯টি ফানুস রয়েছে তাঁদের ভাঁড়ারে। তার কোনওটি লম্বায় ১০ ফুট, চওড়ায় প্রায় ২০ ফুট। টেবিল ঘড়ির আদলে তৈরি একটি ফানুস আবার প্রায় ১২ ফুট উচ্চতার। কোনওটিতে রয়েছে জল সংরক্ষণের স্লোগানের সঙ্গে গাছের ছবি। ডালপালা দিয়ে সেই গাছ জল ধরছে। কোনওটিতে আবার আঁকা হয়েছে বিদ্যাসাগর, কোনওটিতে মহাত্মা গাঁধীর চরকা। অজয়বাবু বলেন, ‘‘জল সংরক্ষণের পাশাপাশি বিদ্যাসাগর আর গাঁধীর জন্মবার্ষিকী নিয়ে থিম করেছিলাম আমরা। অনেকে কিনে এনে ফানুস ওড়ান, তবে নিজেরা তৈরি করে ওড়ানোর মজাই আলাদা।’’

কিন্তু ফানুস ওড়াতে তো বারণ করছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ? কথা থামিয়ে দিয়ে বছর সাতষট্টির বৃদ্ধের দাবি, ‘‘দূষণ ছড়ানো শব্দবাজি বা আতসবাজির রমরমা হওয়ার আগে মানুষ ফানুসই ওড়াত। এক সময় এই ফানুসই তো ছিল মূল আনন্দ। অনেকে এ জিনিস ভুলতে বসলেও আমরা ভুলিনি। পরম্পরা ধরে রাখতেই নাতিকেও ফানুস ওড়ানো শেখাচ্ছি।’’ তিনি জানান, আগে তাঁদের বাড়ি ছিল শোভাবাজারে। ১৯২৫ সালে তাঁরা বিডন স্ট্রিটের বাড়িতে চলে আসার পরে নতুন করে ফানুস ওড়ানো শুরু করেন অজয়বাবুর জেঠু মানিকলাল দত্ত। বাবা যাদবলাল দত্তের হাত ধরে ফানুস তৈরি শিখেছিলেন অজয়বাবুও। পারিবারিক ব্যবসার কাজে ব্যস্ত ছেলে অরিন্দম দত্ত এবং তিনি এ বার ফানুস তৈরি করেছেন চার ছাত্রকে নিয়ে।

Advertisement

পরম্পরা ধরে রাখার কথা বললেন শোভাবাজার মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের বাসিন্দা, পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। চার বন্ধু মিলে ভিডিয়ো-নির্ভর সোশ্যাল সাইট দেখে এ বার ফানুস বানিয়েছেন। শ্যামল বললেন, ‘‘আগে দাদুকে বানাতে দেখেছি। এখন তিনি নেই। তাই সোশ্যাল সাইটে দেখে আমরাই চেষ্টা করেছি।’’ সন্তানদের নিয়ে একই চেষ্টা করেছেন শ্যামপুকুর নন্দন বাড়ির পুত্রবধূ স্নেহা নন্দনও। তাঁর আবার দাবি, ‘‘কলকাতা বিমানবন্দরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ জানি। কিছু ক্ষেত্রে বিপদ ঘটেছে, তবে আমরা সতর্ক হয়েই ওড়ানোর চেষ্টা করি।’’

যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, শব্দবাজি বা অন্য ধরনের বাজির থেকে ফানুসের বিপদ কোনও অংশেই কম নয়। যে কোনও জায়গায় পড়ে গিয়ে এ থেকে যেমন অগ্নিকাণ্ড হতে পারে, তেমনই ফানুসের জেরে সমস্যায় পড়ে পশুপাখিরা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকেও ফানুস বেশ কয়েক বছর ধরেই চিন্তায় রেখেছে। পর্ষদের সদস্য-সচিব আইপিএস অফিসার রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘ফানুস থেকে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই আমরা ফানুস বর্জন করার জন্যই সচেতন করি।’’

শব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ে যেখানে সচেতনতা কম, সেখানে ফানুস রোধে এই শহর কি আদৌ সক্রিয় হবে? প্রশ্ন থেকেই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন