প্রতীকী ছবি।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির কয়েকশো বাসিন্দা। পানীয় জল দূষিত হয়ে পড়াতেই এই সমস্যা বলে মনে করা হচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাঘা যতীন হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেই প্রায় ৩০০ জন আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই কলকাতা পুরসভার ১০১, ১০২, ১০৭ এবং ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শুক্রবার রাত থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। শনিবার ডায়রিয়া ছ়ড়ানোর খবর মিলেছে ১০৮ ও ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডেও।
কিন্তু কী ভাবে পানীয় জল দূষিত হয়ে পড়ল, তা শনিবার রাত পর্যন্তও জানাতে পারেননি পুরকর্তারা। সমস্যা ঠেকাতে কিছু এলাকায় আপাতত পুরসভার জল খাওয়া বন্ধ রেখেছেন বাসিন্দারা। বাঘা যতীন-সহ কিছু এলাকায় জল কিনে খাচ্ছেন অনেকেই।
পুরসভা সূত্রে খবর, দিন দুয়েক ধরে কসবা, যাদবপুর, পাটুলি ও বাঘা যতীন এলাকার অনেকেই বমি, পেট খারাপে ভুগছিলেন। সঙ্গে পেটব্যথাও ছিল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধাপার জয় হিন্দ প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা পানীয় জল যাঁরা ব্যবহার করেছেন, মূলত তাঁদের মধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
শনিবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বাঘা যতীন হাসপাতালে আক্রান্তদের দেখতে যান। জল থেকে ডায়রিয়া ছ়ড়ানোর কথা মেনে নিয়েছেন মেয়রও। তিনি বলেন, ‘‘ধাপা থেকে আসা পানীয় জলে সমস্যা আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। ডায়রিয়া ঠেকাতে ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে মোট ৩১ জন ভর্তি হয়েছেন। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই ১০১, ১০২ ও ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মেয়রের পাশাপাশি হাসপাতালে হাজির হন পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারও। কয়েক জন অসুস্থকে বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও খবর।
১০২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর রিঙ্কু নস্কর জানান, ওই ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাতেই ধাপার প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা হয়। ডায়রিয়া ছড়াতেই তিনি পুরসভায় খবর দেন। রিঙ্কু বলেন, ‘‘মেয়র তো ফোন ধরেন না। তাই জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি-কে জানিয়েছি। পুরসভার জল খেতে নিষেধ করে মাইকে প্রচারও করেছি।’’ বাঘা যতীন এলাকার অনেকে জানাচ্ছেন, পুরসভার জলে সংক্রমণ ছড়ানোর খবরে অনেকেই বোতলের জল কিনে খাচ্ছেন। তাই জলের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানিরা। তবে রিঙ্কুদেবী জানান, হ্যালোজেন ট্যাবলেট বিলি করা হয়েছে। অন্য জায়গা
থেকে জল এনে সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এ দিন বেলা গড়াতেই ডায়রিয়া ঠেকাতে উদ্যোগী হন সুশান্ত ঘোষ, বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত, অরূপ চক্রবর্তীর মতো তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য জানান, তাঁর এলাকায় রবীন্দ্রপল্লির এ ব্লকে ও বাঘা যতীনের ডি ব্লকে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ জানান, কসবার নস্করহাট, রাজডাঙা মেন রোড এবং স্কুল রোডে কয়েকটি বাড়িতে ডায়রিয়া হয়েছে। ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি এলাকাতেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেকে। সকলের কাছে পুরসভার পক্ষ থেকে ওআরএস, হ্যালোজেন ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।
কী ভাবে ছড়াল সংক্রমণ? পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিজি বিভাস মাইতি জানান, জয় হিন্দ প্রকল্পের জলের ট্যাঙ্ক পরীক্ষা করে দূষণের প্রমাণ মেলেনি। পাটুলির প্রকল্প থেকেও দক্ষিণ শহরতলির কিছু এলাকায় জল সরবরাহ করা হয়। সেই ট্যাঙ্কও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুরসভার একাংশ মনে করছেন, ভূগর্ভস্থ জলের পাইপ ফেটে গিয়েও জলে দূষণ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে যেখানে নিকাশি ও পানীয় জলের পাইপ পাশাপাশি গিয়েছে, সেখানে এমন আশঙ্কা বেশি। পুরসভার তরফে অবশ্য জল খেতে নিষেধ করে এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি।