পার্কিং নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব দুই দফতরে

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত বছরই পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম মতো চলতি বছরেই নতুন দরপত্র ডাকার কথা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:১৭
Share:

একেই শহরে বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে নতুন পার্কিং নীতি কী হবে, তা ঠিক করতেই হিমশিম খাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, নতুন পার্কিং নীতি নিয়ে অর্থ দফতর ও পার্কিং দফতরের মধ্যে দেখা দিয়েছে চূড়ান্ত মতানৈক্য।

Advertisement

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত বছরই পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম মতো চলতি বছরেই নতুন দরপত্র ডাকার কথা।
তার আগেই শুরু বিতর্ক। পার্কিংয়ের নতুন দায়িত্ব কো-অপারেটিভ সোসাইটি, না কি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে, তা নিয়েই দু’রকম মত অর্থ ও পার্কিং দফতরের।

প্রসঙ্গত, এত দিন শহরে পার্কিং লটের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলি অগ্রাধিকার পেত। তারাই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে পার্কিং-ফি আদায় করত। অতীতে পার্কিং সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টও রায় দিয়ে বলেছিল যে, পার্কিংয়ের দরপত্র ডাকার ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ যেন কো-অপারেটিভ সোসাইটির কথাটা বিবেচনার মধ্যে রাখেন। সেই মতোই বর্তমানে শহরে পার্কিং-ফি আদায়ের জন্য ৩০টির মতো কো-অপারেটিভ সোসাইটি রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। নতুন পার্কিং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলির জন্য যাতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ রাখা যায়, তার প্রস্তাব দিয়েছিল পুর পার্কিং দফতর।

Advertisement

কিন্তু তাতেই বেঁকে বসে পুর অর্থ দফতর। তাদের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলির জন্য ১০ শতাংশের বেশি রাখা সম্ভব নয়। কারণ, তাদের থেকে পুরসভার আয় বেশি হয় না। তাই দরপত্রের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু তাতে আবার পার্কিং বিভাগ আপত্তি তোলে। পার্কিং বিভাগের পাল্টা যুক্তি, গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি দেখভালের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। সব সংস্থা এই কাজটা করতে পারবে না। যে হেতু দীর্ঘদিন ধরে কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলি এই কাজ করে এসেছে, এ ক্ষেত্রেও সেটাই করা হোক। কিন্তু অর্থ বিভাগ সে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।

দুই দফতরের টানাপড়েন মেটাতে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু দিন আগে মেয়র পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি তোলা হয়। বৈঠকে দুই দফতরের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। সেই মতো দুই দফতরের কর্তারা সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে সেটা কবে হবে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। যদিও পার্কিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘নতুন পার্কিং নীতির ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’’

পুর প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, পার্কিং নীতি তৈরি নিয়ে এই টালবাহানা নতুন নয়। পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল সেই ২০০৭ সালে। তার সাত বছর পরে ২০১৪ সালে ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তার এক বছর পরে, ২০১৫ সালে নতুন দরপত্র ডাকার কথা থাকলেও ডাকা হয়নি। উল্টে পার্কিংয়ের চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্ধিত সেই সময়সীমাও গত বছর শেষ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন