টাকা নেই, জেলার পুজোয় ভরসা শহরের অবশিষ্ট

চন্দননগরে চলে গিয়েছে ত্রিধারা সম্মিলনী ও দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর মণ্ডপ। জগৎ মুখার্জি পার্কের ‘বারাণসীর মন্দির’ আবার দুর্গাপুজোর পরে পৌঁছে গিয়েছে নিউ ব্যারাকপুরে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫২
Share:

পুনর্ব্যবহার: নাকতলা উদয়নের মণ্ডপের এই অংশই যাচ্ছে জেলায়। নিজস্ব চিত্র

বারো চাকার ছ’টি লরির ব্যবস্থা করাই ছিল। গন্তব্য, উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন থেকে শিলিগুড়ি! প্রতিটি লরি দু’দিন করে কাজ করায় কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজোর গোটা মণ্ডপ তুলে নিয়ে যেতে সময় লেগেছিল প্রায় বারো দিন। কালীপুজো শেষ হতেই এ বার সেই মণ্ডপেরই গন্তব্য চন্দননগর। উপলক্ষ জগদ্ধাত্রী পুজো।

Advertisement

অন্যান্য বারের মতো এ বারেও কলকাতার দুর্গাপুজোর মণ্ডপেই সাজছে জেলা। কালীপুজো শেষ হতে একই ‘রীতি’ জগদ্ধাত্রী পুজোর ক্ষেত্রেও। কোথাও দক্ষিণ কলকাতার গোটা মণ্ডপ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের গ্রামে। কোথাও আবার কলকাতার মণ্ডপের বিভিন্ন অংশ দিয়েই সাজানো হয়েছে জেলার কালী প্রতিমার আশপাশ। দীর্ঘদিন থেকে যাঁরা মণ্ডপসজ্জার কাজে যুক্ত, তাঁরা অবশ্য জানাচ্ছেন, অন্য বারের থেকে এ বার কলকাতার মণ্ডপ জেলায় যাওয়ার হিড়িক অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রেও কারণ সেই টাকার আকাল।

কাশী বোস লেনের মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা তনু দে বললেন, ‘‘আমরা পেলেও আমাদের মতো অনেকেই কলকাতায় পুজোর কাজ করে এখনও টাকা পাননি। পরিস্থিতি এ রকম হতে পারে বুঝে দুর্গাপুজোর আগেই তাঁরা জেলার বরাত নিয়ে রেখেছিলেন। তা ছাড়া কলকাতার পুজোতেই এ বার টাকা নেই! জেলা বেশি টাকা দিয়ে মণ্ডপ করবে কোথা থেকে?’’ অন্য এক মণ্ডপ শিল্পীর কথায়, ‘‘কলকাতার পুজোর কাঠামো দিয়ে মণ্ডপ করলে জেলায় খুব দুর্নাম হয়। তবু উপায় নেই। কম টাকায় মণ্ডপ পেতে জেলার বহু পুজো উদ্যোক্তাই এ বার শহরের পুজো ধরেছেন। শিল্পীদের যাঁরা এত দিন জেলায় মণ্ডপ পাঠাননি তাঁরাও এ বার পাঠিয়েছেন।’’

Advertisement

যেমন চন্দননগরে চলে গিয়েছে ত্রিধারা সম্মিলনী ও দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর মণ্ডপ। জগৎ মুখার্জি পার্কের ‘বারাণসীর মন্দির’ আবার দুর্গাপুজোর পরে পৌঁছে গিয়েছে নিউ ব্যারাকপুরে। তবে মণ্ডপ ব্যবহার করা হলেও জগৎ মুখার্জি পার্কের মতো সেখানে আর কৃত্রিম গঙ্গা ফুটিয়ে তোলা যায়নি। মুদিয়ালি ক্লাবের মণ্ডপও কালীপুজোর পরে ঘুরতে চলেছে দু’জায়গায়। প্লাস্টিকের উপরে রং এবং আলো দিয়ে ফুটিয়ে তোলা মুদিয়ালির ওই মণ্ডপ কালীপুজোর জন্য গিয়েছিল তমলুকে। কালীপুজো মিটতেই সেই মণ্ডপের এ বারের গন্তব্য চন্দননগরের বুড়ো কালীতলা। এর পরে সেই মণ্ডপ বেঙ্গালুরুর এক কলা অ্যাকাডেমিতে যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন মুদিয়ালির পুজো উদ্যোক্তারা।

মুদিয়ালির মণ্ডপ শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা বললেন, ‘‘ভাল মণ্ডপ হলে অনেকেই নিতে চান। এর সঙ্গে টাকার একটা ব্যাপার তো আছেই। জেলার কালী বা জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তারা যে টাকায় এই মণ্ডপ পান তা নিজেরা শিল্পী দিয়ে ওই টাকায় করানো সম্ভব নয়।’’ এর মধ্যেই আক্ষেপ রয়েছে গৌরাঙ্গের। এ বার বড়িশার এক দুর্গাপুজোরও মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে পুজোর পরের টানা বৃষ্টিতে সেখানকার বাঁশ ও মাটির কাজের মণ্ডপ জেলায় চালান দেওয়া যায়নি। একই ভাবে প্রবল ভারী হওয়ায় জেলায় পাঠানো যায়নি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপ। নেওয়া যায়নি হাতিবাগান সর্বজনীনের সম্পূর্ণ লোহার তৈরি মণ্ডপের কাঠামোও।

জেলায় যায়নি নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের দুর্গাপুজোর কিছুই। বরং পুজোর পরে সেখানকার প্রতিমা থাকছে কলকাতাতেই। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানান, সৌন্দর্যায়নের জন্য নাকতলার ফাইবারের দুর্গাপ্রতিমা বসছে বাইপাসের ধারে। সেখানে প্রতিমা বসানোর কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। বাপ্পাদিত্যের কথায়, ‘‘টাকা বাঁচবে বলে জেলা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ঠিকই। তবে আমাদের পুজো শহরেই রাখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন