rg kar medical college

RG Kar Medical College: রোগী দেখবেন কারা, আর জি করে প্রশ্ন ক্ষুব্ধ পরিজনদের

বিক্ষোভকারী ও প্রশাসন, উভয়েই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৪৫
Share:

সমস্যা: পড়ুয়া-চিকিৎসকদের বিক্ষোভের জেরে ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না রোগীদের। মঙ্গলবার, আর জি করে। নিজস্ব চিত্র।

ট্রমা কেয়ারে নিয়ে আসা রোগীকে পরীক্ষার পরে চিকিৎসক ভর্তি হতে বললেও রাজি হচ্ছিলেন না পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, যে হাসপাতালে আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছে সেখানে তো চিকিৎসকই নেই। তা হলে তো রোগীর চিকিৎসা হবে না।

Advertisement

শেষমেশ কর্তব্যরত পুলিশকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী এবং রোগী সহায়কেরা তাঁদের বোঝান, পড়ুয়া-চিকিৎসকদের বিক্ষোভ চললেও শিক্ষক-চিকিৎসকেরা আছেন। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলিয়ে দেওয়া হয় ওই রোগীর পরিজনেদের। তার পরেই তাঁরা ট্রমা কেয়ারে রোগীকে ভর্তি করতে রাজি হন। মঙ্গলবার এমনও ঘটনার সাক্ষী থাকল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

এ হেন ঘটনায় অশনিসঙ্কেত দেখছেন চিকিৎসকদের একাংশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, “দীর্ঘ সময় ধরে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। ইন্টার্ন, পিজিটি-রা কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। পরিষেবার বিষয়েও তাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে সেটা হাসপাতালের পক্ষে ভাল হবে না।’’ এ দিনও ওই হাসপাতালে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। বিক্ষোভকারী ও প্রশাসন, উভয়েই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। স্বাস্থ্যকর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, অনশন তুলে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলন চলতে পারে। একমাত্র তা হলেই তাঁরা কলেজে এসে সরেজমিনে সব সমস্যা খতিয়ে দেখবেন।

Advertisement

অন্য দিকে, অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অনড় বিক্ষোভকারী পড়ুয়া-চিকিৎসকদের একাংশ। এ দিন তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আন্দোলন চলাকালীনই স্বাস্থ্যকর্তারা এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখুন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, “অধ্যক্ষকে দেখে পড়ুয়ারা পড়াশোনা করতে আসেননি। আর প্রশাসনিক বিষয় দেখা তাঁদের কাজ নয়। অধ্যক্ষ বা অন্য কাকে রাখা হবে কিংবা বদলি করা হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব বা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু তাঁরা কে কী করবেন, সেই বিষয়েও যদি পড়ুয়ারা সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন, তা হলে সেটা খারাপই হচ্ছে।’’

এ দিনও ইন্টার্নেরা কোনও বিভাগে কাজে যোগ দেননি। তবে পিজিটি-দের কয়েক জন সকালে জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে কাজে যোগ দিয়েছেন। বিকেলেও কয়েক জন যোগ দেন। কত জন পিজিটি কাজে যোগ দিয়েছেন, তা জানতে এ দিন সকালে ও সন্ধ্যায় প্রতিটি বিভাগ ঘোরেন ভারপ্রাপ্ত সুপার, ডেপুটি সুপার-সহ অন্য কর্তারা। সূত্রের খবর, শুধু বিভাগে গিয়ে খোঁজ নেওয়া নয়, কোথায় কত জন পিজিটি অনুপস্থিত রয়েছেন তারও তালিকা নিয়েছেন ওই আধিকারিকেরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ডিউটি থাকা সত্ত্বেও যাঁরা কাজে যোগ দেননি তাঁদের অনুপস্থিত দেখানো হবে। তবে এ দিনও হাসপাতালে আসেননি অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।

আর জি করের পরিষেবা স্বাভাবিক ও সচল রাখতে এ দিন ৩৮টি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, মেন্টর কমিটি এবং অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য, বিশেষ সচিব (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) তমালকান্তি ঘোষ। সূত্রের খবর, পিজিটি ও ইন্টার্নদের ব্যক্তিগত ভাবে ডেকে যাতে বোঝানো হয়, সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় প্রধানদের। কারণ, কোভিডের কারণে এমনিতেই পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে এ হেন আন্দোলন, অনশন করে সেই ক্ষতি আরও বাড়ছে। অন্য দিকে বিক্ষোভকারীরাও এ দিন জানিয়ে দেন, অনশনে কয়েক জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। স্বেচ্ছাচারী ও পক্ষপাতদুষ্ট অধ্যক্ষকেও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

এক পড়ুয়ার কথায়, “আমাদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য মেন্টর কমিটি তৈরি করা হলেও সেই নির্দেশে স্বাস্থ্যসচিবের কোনও সই নেই। দাবিগুলি মেনে নেওয়া হয়েছে বলা হলেও, তা সত্যি নয়। সে বিষয়ে লিখিত কিছু দেওয়া হয়নি।’’ কর্তৃপক্ষের দাবি, “স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে বৈঠকে পড়ুয়াদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, পড়াশোনার বাইরে শুধু আন্দোলন যেন প্রধান না হয়। তাই অনশন তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই প্রথম শর্ত ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন