উৎপাত: কালীপুজোতেও এমন হওয়ার আশঙ্কায় মানুষ। ফাইল চিত্র
দ্বাদশীর রাত দশটা। এনএসসি বসু রোড। যানবাহন চলাচল এক কথায় বন্ধ। কারণ, রাস্তার দু’দিক দিয়েই চলেছে একের পর এক বিসর্জনের শোভাযাত্রা। যাতে নির্বিচারে বাজছে ডিজে। সঙ্গে ফাটছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। রাস্তায় পুলিশকর্মীরা থাকলেও তাঁরা নির্বিকার দর্শক।
রাত সাড়ে ন’টা। বীরেন রায় রোড (পশ্চিম)। রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলেছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। তার মাঝেই পথ আটকে বাজানো হচ্ছে ডিজে। ডিজে-র তাণ্ডব দেখে সেখানেও নিষ্ক্রিয় রইল পুলিশ, অভিযোগ এমনটাই।
এ বার মূল কলকাতায় দুর্গাপুজোর ভাসানে ডিজে (তারস্বরে বড় সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গান)-র পায়ে অনেকটাই বেড়ি পরিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু দক্ষিণ শহরতলির যে সব থানা পরে কলকাতা পুলিশের এলাকায় ঢুকেছে, সেখানে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে বেজেছে আগের মতোই। আর যে হেতু দুর্গাপুজোর তুলনায় কালীপুজোর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই সেই ভাসানে কী যে হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত বেহালা, ঠাকুরপুকুর, নেতাজিনগর, বাঁশদ্রোণী ও পাটুলির মতো বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
প্রতি বছর টালিগঞ্জ, রানিকুঠি, গড়িয়া, কুঁদঘাট, হরিদেবপুর, বেহালা-সহ দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় কালীপুজোর বিসর্জনের শেষ দু’দিন রাস্তা বন্ধ করে ডিজে বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে প্রভাবশালী পুজোগুলি। যা পুলিশ দেখেও দেখে না। অভিযোগ, রাস্তা বন্ধ করে ডিজে বাজিয়ে, শব্দবাজি ফাটিয়ে ওই শোভাযাত্রা চলতে থাকায় শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে, এনএসসি বসু রোড, রাজা সুবোধ মল্লিক রোড, ঠাকুরপুকুরের মহাত্মা গাঁধী রোডের মতো দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন রাস্তায়। বিকল্প কোনও রাস্তা না থাকায় ওই রাস্তাগুলি এলাকাবাসীর কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু ওই সময়ে সন্ধ্যার পর থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় এলাকাবাসীকে।
পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, এ বার শহরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে বাজেইনি। যা বেজেছে, তা আসলে বড় আকারের সাউন্ড বক্স। তাতেই তারস্বরে বেজেছে গান। প্রকাশ্যে সেগুলিরও ব্যবহার নিষিদ্ধ। তা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিল না কেন? পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, ওই সব পুজোর কর্তারা এলাকায় অতি প্রভাবশালী। ফলে, তা বন্ধ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। পুলিশেরই একাংশের আবার অভিযোগ, বিসর্জনে এ বার পুলিশ ডিজে নিয়ে নরম অবস্থান নিয়েছে। তাই এত ভোগান্তি।
দক্ষিণ শহরতলির মানুষের অভিযোগ, এ বছর গণেশপুজোর বিসর্জনেও ডিজে-র তাণ্ডবে কেঁপেছিল মহানগরী। এর পরে দুর্গাপুজোর ভাসানেও একই চিত্র। লালবাজার সূত্রের খবর, কাল, বৃহস্পতিবার কালীপুজো নিয়ে পুজো কমিটিগুলির পাশাপাশি পুরসভা, সিইএসসি, দমকলকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক রয়েছে পুলিশ কমিশনারের। সকলের আশা, ওই বৈঠকে কমিশনার পুজোর বিসর্জনে শব্দদৈত্যের তাণ্ডব নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবেন।