বহুতল থেকে পড়ে মৃত কুকুর, অভিযুক্ত প্রোমোটার

অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে সঞ্জিত মহন্ত নামে এলাকার এক প্রোমোটার সঙ্গীদের নিয়ে তাঁর পাঁচতলা বাড়ির তিনতলার বারান্দা থেকে সাড়ে চার মাসের একটি কুকুরকে নীচে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:১৬
Share:

নির্মম: এই বহুতলের তিনতলা থেকেই কুকুরটিকে (ডান দিকে) ছুড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার, বাগুইআটিতে। নিজস্ব চিত্র

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১৬টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধারের পরে মাস দেড়েক কেটে গিয়েছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত দুই নার্সিং পড়ুয়ার শাস্তি নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা করছে স্বাস্থ্য দফতর। এর মধ্যেই ফের একটি কুকুরকে খুনের অভিযোগ দায়ের হল থানায়। এ বারের ঘটনা বাগুইআটির হেলাবটতলা এলাকার। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নিউ টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন অনন্যা পাণ্ডা নামে এক মহিলা।

Advertisement

তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে সঞ্জিত মহন্ত নামে এলাকার এক প্রোমোটার সঙ্গীদের নিয়ে তাঁর পাঁচতলা বাড়ির তিনতলার বারান্দা থেকে সাড়ে চার মাসের একটি কুকুরকে নীচে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে কুকুরটির। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁকেও হেনস্থা করা হয় বলে অনন্যার অভিযোগ। এর পরে ওই রাতেই নিউ টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অনন্যা। পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে মৃত কুকুরটির দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত পশু হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

ওই থানার এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে কুকুরটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সঞ্জিত অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, ‘‘কুকুরটি আমার ফ্ল্যাটের উপরে রাতভর বাঁধা ছিল। নীচে পড়ে গিয়েছে। কে ফেলেছে বলতে পারব না। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ওই মহিলা আমার মিস্ত্রিদের মারধরও করেছেন।’’ তাঁর ফ্ল্যাটে কুকুরটিকে কে বেঁধে রেখেছিল? স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি সঞ্জিত। রাতে অবশ্য থানায় গিয়ে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

Advertisement

গত ১৩ জানুয়ারি এনআরএস চত্বরে একসঙ্গে ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে একটি ভিডিয়োর সূত্র ধরে ওই হাসপাতালের দুই নার্সিং পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় ধৃতেরা জামিন পান। ওই সময়ে পশু অধিকার নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয় নানা মহলে। কড়া আইন প্রণয়নের দাবি তোলার পাশাপাশি পথকুকুরদের নির্বীজকরণের বিষয়টিও সামনে আসে। এ ব্যাপারে কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় কুকুরের নির্বীজকরণের কাজ চলছে। যাঁরা যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের এলাকায় গিয়ে পুরসভার দল ওই কাজ করছে।’’

বাগুইআটিতে যে কুকুরটির মৃত্যু হয়েছে, তার নাম কলি। অন্য কিছু কুকুরের সঙ্গে কলিরও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল অনন্যার বাড়িতে। অনন্যা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ কাপড় মেলতে বারান্দায় যাই। ঠিক তখনই আমাদের উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের তিনতলার বারান্দা থেকে কিছু একটা ধপ করে নীচে পড়ে। তাকিয়ে দেখি, কলি পড়ে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ।’’ অনন্যা এর পরে দাবি করেন, ‘‘ওই প্রোমোটারের মিস্ত্রিরা উল্টো দিকের ফ্ল্যাটে রঙের কাজ করছিলেন। সঞ্জিতই তাঁদের বলেন কলিকে নীচে ফেলে দিতে। সঞ্জিত এ-ও বলেছেন, থানায় গেলেও কেউ কিছু করতে পারবে না।’’

ওই পাড়ার এক বাসিন্দা অবশ্য জানাচ্ছেন, পশুপ্রেমী অনন্যার সঙ্গে কুকুরকে খাওয়ানো নিয়ে সঞ্জিতের বিবাদ দীর্ঘদিনের। নিজের তৈরি নতুন ফ্ল্যাটের সামনে সঞ্জিত কুকুরদের খাওয়ানো বন্ধ করতে চান। সঞ্জিত নিজে অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি। পাড়ার লোকেরাই কুকুরে অতিষ্ঠ হয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন