হুঁশ ফেরে না হাসপাতালের

সিঁড়ির পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রয়েছে ওরা। সামনেই লোহার গ্রিলের কাছে রোগীদের জন্য খাবারের থালা সাজানো রয়েছে। সেখান দিয়ে অবলীলায় হাঁটাচলা করছে ওরা।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২০
Share:

দৌরাত্ম্য: এসএসকেএমের ক্যান্টিনের রান্নাঘরে অপেক্ষায় কুকুর। নিজস্ব চিত্র

সিঁড়ির পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রয়েছে ওরা। সামনেই লোহার গ্রিলের কাছে রোগীদের জন্য খাবারের থালা সাজানো রয়েছে। সেখান দিয়ে অবলীলায় হাঁটাচলা করছে ওরা। থালায় মুখ দিয়ে গন্ধ শুঁকছে। রোগীর শয্যার নীচে দিব্যি হুটোপাটিও চলছে ওদের। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে এ ভাবেই ঘোরাফেরা করছে বেড়ালছানারা।

Advertisement

আর জি করের এই দৃশ্য অবশ্য ব্যতিক্রম কিছু নয়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কুকুরছানাদের মেরে ফেলার ঘটনায় চার দিকে যখন তোলপাড় চলছে, তখন শহর জুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরে প্রায় একই ছবিই দেখা গিয়েছে। যা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার: কুকুর-বেড়ালের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে প্রায় কোথাওই কর্তৃপক্ষের কোনও তৎপরতা নেই। বেলেঘাটা আইডি হোক বা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল— চারপেয়েদের জন্য দুয়ার সর্বত্রই অবারিত। এমনকি, খাস এনআরএসে কোনও পরিবর্তন নজরে পড়েনি।

মঙ্গলবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডিপথেরিয়া রোগীর শয্যার পাশেই অবাধে হেঁটে বেড়াচ্ছে চারটে বেড়াল। কোনও রোগী শয্যা থেকে নেমে শৌচালয়ের দিকে পা বাড়ালেই তার পিছনে ছুটতে শুরু করছে ওই বেড়ালেরা। রোগীরা জানালেন, দুপুরে খাবার নিতে যাওয়ার সময়েও কয়েকটি বেড়ালছানা পায়ে পায়ে ঘুরতে থাকে।

Advertisement

ন্যাশনাল মে়ডিক্যালের জরুরি বিভাগের সামনেই পায়চারি করছিল কয়েকটি কুকুর। হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতেই তারা দৌড়তে শুরু করল। সার্জারি আর স্ত্রী-রোগ বিভাগের একতলায় তাদের অবাধ যাতায়াত। এ দিন নীলরতনের স্ত্রী-রোগ বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর পাশে অবাধে বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিজনদের অভিযোগ, বেড়ালের জন্য এক মুহূর্তও খাবার ফেলে রাখার উপায় নেই। হাসপাতালের এক নার্সের কথায়, ‘‘এখন কাউকে নিয়েই কিছু বলা যাবে না। দেখছেন না, নার্সিং হস্টেলে কী হয়েছে!’’

সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের পরিজনদের অনেকেরই অভিযোগ, ওয়ার্ডে বেড়াল-কুকুর ঘুরে বেড়ালেও তাদের তাড়ানোর কোনও চেষ্টা হয় না। রোগী শৌচালয়ে গেলেই তারা ফাঁকা বিছানা দখল করে নেয়। এমনকি, ভাতের থালাতেও মুখ দেওয়ার চেষ্টা করে। আর জি করে অনেক সময়ে রোগীদের লাঠি হাতে বসে থাকতে হয়। কিন্তু কোনও হাসপাতালই এই সমস্যা নিয়ে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করে না।

কর্তাদের অবশ্য দাবি, হাসপাতাল চত্বর থেকে কুকুর-বেড়াল সরানোটা খুব জটিল বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, যে এলাকা থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়া হবে, নির্বীজকরণের পরে পুরসভাকে আবার সেই এলাকাতেই কুকুরটিকে রেখে যেতে হবে। তাই কুকুরের উপদ্রব বাড়লে পুরসভাকে খবর দেওয়া হয়। পুরসভা হাসপাতাল চত্বর থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যায়। তার পরে নির্বীজকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফের হাসপাতাল চত্বরেই ফিরিয়ে দেয়।

কুকুরের থেকেও বড় সমস্যা হল বেড়াল। হাসপাতাল-কর্তাদের একাংশ জানান, বেড়াল বন্যপ্রাণী না গৃহপালিত, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। তাই বেড়াল কে নিয়ে যাবে কিংবা বেড়ালের উপদ্রব বাড়লে কী করতে হবে, তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানা নেই। কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের ভিতরে বেড়াল ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ হামেশাই পাওয়া যায়। তাই বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু বেড়ালের উপদ্রব কমানোর জন্য কী করণীয়, তার উত্তর পাইনি। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছি।’’

স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ জানান, হাসপাতাল চত্বরে কুকুর-বেড়ালের উৎপাত নিয়ন্ত্রণ করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। বছর দুই আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা প্রাণী-পিছু পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু অন্যত্র সরানো নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি।

হাসপাতাল কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতাল চত্বরে উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলা বন্ধ করলেই সমস্যা মিটবে। অনেক সময়ে হাসপাতালের কর্মীরাও ওদের খাবার দেন। তাই তারা হাসপাতাল ছেড়ে যেতে চায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন