শুকিয়েছে সাজানো পার্ক, জমা জলে গেরস্থালি মশার

ফোয়ারা-ঝর্না অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেই আধারে জল জমছে অবাধে। আর জল জমলে কী হয়, টের পাচ্ছে তামাম লেক টাউন এবং খালের উল্টো দিকে সল্টলেকের বেশ কিছু এলাকা। পুজোর পর থেকেই ডেঙ্গিতে কাবু এই দুই অঞ্চল।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share:

বন্ধ হয়ে যাওয়া ফোয়ারাতেও জমেছে জল। সেখানে অবাধে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বাহারি ফোয়ারা, নয়নাভিরাম ঝর্না, সঙ্গে কেয়ারি করা বাগান। প্রথম দু’টি ছিল। শেষেরটি ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। লেক টাউনে ভিআইপি রোডের ধারে কেষ্টপুর খালের পাশের পার্কের ছবি এটা।

Advertisement

ফোয়ারা-ঝর্না অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেই আধারে জল জমছে অবাধে। আর জল জমলে কী হয়, টের পাচ্ছে তামাম লেক টাউন এবং খালের উল্টো দিকে সল্টলেকের বেশ কিছু এলাকা। পুজোর পর থেকেই ডেঙ্গিতে কাবু এই দুই অঞ্চল।

লেক টাউন-বাঙুরে ইতিমধ্যেই তিন জনের প্রাণ নিয়েছে ডেঙ্গি। তার পরেও পার্কের জল-ছবি বদলায়নি। জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। ডাস্টবিনেও তাই। সেই জলে থিকথিক করতে দেখা গেল এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভাও। পার্কের গেটে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গি সচেতনতায় তেমন নজরদারি আছে বলে জানালেন না তাঁরা।

Advertisement

গঙ্গার ধারে মিলেনিয়াম পার্কের আদলে বছর চারেক আগে কেষ্টপুর খালপাড় সৌন্দর্যায়নের জন্য শুরু হয় পার্ক তৈরির কাজ। তখন প্রচুর গাছ কাটা পড়ে। তা নিয়ে বিতর্কও হয়। সেই সময়ে প্রশাসন জানিয়েছিল, খালের ধারে পার্ক হলে জঞ্জাল জমবে না। আগে যেমনটা হত। তা ছাড়া, প্রচুর মানুষ পার্কে আসবেন। বদলে যাবে এলাকার চেহারা।

লেক টাউনের বাসিন্দা সুপ্রতীক দত্ত বলেন, ‘‘খালের পাশের চেহারা যে বদলে গিয়েছে, তাতে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু শুরুর দিকে পার্ক যেমন সাজানো-গোছানো ছিল, তার সেই সুদিন গিয়েছে। এখন সেটা মশার ঘর-বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সে দিকে নজর না দিলে ডেঙ্গি তো এমন প্রাণঘাতী হবেই।’’

খাল বরাবর পার্কের ধারে হাঁটার রাস্তা। আগে যাকে সবুজ গালিচা বলে মনে হত, সপ্তাহখানেক আগেও তা ছিল ঘাসের জঙ্গল। পুজোর আগে সেই ঘাস কাটা হয়। কিন্তু জল যে জমছে, সে দিকে কর্তৃপক্ষের কোনও নজর পড়েনি বলেই অভিযোগ।

পার্কে রকমারি আলো দেওয়া ফোয়ারা ছিল। সেই ফোয়ারার আলো উধাও। জলের পাইপেও জং ধরায় জলাধার থেকে জমা জল সেঁচে ফেলা হয়েছিল। সেখানে ফের জল জমেছে। তাতে দিব্যি ডিম পাড়ছে মশা। পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে যেখানে গড়িয়ে নামত ঝর্নার জল, তার অবস্থাও সঙ্গিন। সেই জল যেখানে এসে জমত, তার উপরে কাঠের সেতু। সেখানেও জমে রয়েছে জল। সেই জলে ইতিউতি ডুব সাঁতার দিতে দেখা গেল অগুন্তি মশার লার্ভাকে।

প্লাস্টিক ফেলার ডাস্টবিনও জলে টইটম্বুর। সেখানে কিলবিল করছে অজস্র মশার লার্ভা। স্কুল আর পড়তে যাওয়ার মাঝের সময়টুকু কাটানোর জন্য দুই কিশোরী পার্কে ঘুরতে এসেছিল। ডাস্টবিনের মধ্যে মশার লার্ভা দেখে ঘোরার ইচ্ছে অবশ্য তাদের আর হয়নি। পার্কের ধার ঘেঁষে লেক টাউন ট্র্যাফিক গার্ড। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরাও সেখানে বসেন মাঝেমধ্যে। তাঁরাও জানালেন, বাগানের দিকে নজর থাকলেও জল নিয়ে তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার মধ্যে হলেও এই পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণ করে সেচ দফতর। ডেঙ্গি নিয়ে যখন এমন আতঙ্ক চার দিকে, তখন পার্কে কেন নজর নেই সেচ দফতরের?

সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের যে কমিটি রয়েছে, সেখানে আমাদের দফতরের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁরা যেমন পরামর্শ দেন, আমরা তেমন ভাবে কাজ করি। ওই পার্কের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করব। আমাদেরও তো দায়িত্ব রয়েছে এই বিষয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন