বাবুঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারিবাগের বাসে বসেছিল মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। আনমনে জানলা দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করছিল সে। এমন সময়ে হুড়মুড়িয়ে বাসে উঠলেন চার যুবক। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই ব্যক্তির কলার ধরে টানতে টানতে বাস থেকে নামিয়ে আনলেন তাঁরা।
ব্যাপারটা কী? কলকাতা পুলিশ বলছে, ইমতিয়াজ আহমেদ নামে ওই ব্যক্তি উত্তর-পূর্ব ভারতের মাদক পাচার চক্রের এক চাঁই। তার সঙ্গে নাগাল্যান্ডের কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীরও যোগাযোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তিকে পাকড়াও করার পরেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। তার পকেট থেকে উদ্ধার করা হয় পার্সেল ‘বুক’ করার একটি টিকিটও। তাতে লেখা ছিল, একটি প্যাকিং বাক্সে পশুখাদ্য নিয়ে যাচ্ছে সে। টিকিটের নম্বর মিলিয়ে বাসের ছাদ থেকে বিরাট আকারের ওই বাক্সটি নামানো হয়। তার ভিতর থেকেই উদ্ধার হয় ১২০ কিলোগ্রাম গাঁজা।
পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বিরাট পরিমাণে গাঁজা শহরে ঢোকার খবর পেয়েছিলেন লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার অফিসারেরা। সেই সূত্র ধরেই নিজেদের ‘সোর্স’-দের কাজে লাগান তাঁরা। শুক্রবার খবর মেলে, সেই রাতে ওসা মা বিন লাদেনের মতো দেখতে এক ব্যক্তি বাবুঘাট থেকে হাজারিবাগ যাওয়ার বাসে উঠবে। তার সঙ্গে অনেক গাঁজা রয়েছে। খবর অনুযায়ী বাবুঘাটের বিভিন্ন বাসের উপরে নজরদারি শুরু হয়। শেষমেশ রাতের হাজারিবাগ যাওয়ার বাসে দেখা মেলে লাদেনরূপী ইমতিয়াজের।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইমতিয়াজ নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা। নাগাল্যান্ড, মণিপুর থেকেই কলকাতায় মাদক পাঠাত সে। এই শহরে তার চক্রের বিভিন্ন এজেন্টও রয়েছে। কিন্তু এমন চাঁই কেন নিজেই গাঁজা নিয়ে যাচ্ছিল? পুলিশের দাবি, গোয়েন্দাদের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এজেন্টদের উপরে ভরসা রাখতে পারছিল না ইমতিয়াজ। তাই হাজারিবাগ থেকে প্রচুর পরিমাণে গাঁজার বরাত পাওয়ায় নিজেই যাত্রী সেজে ওই মাল সরবরাহ করতে যাচ্ছিল। তাই সম্প্রতি তিলজলায় বাড়ি ভাড়া নিয়েও থাকছিল সে।
গোয়েন্দারা বলছেন, ইমতিয়াজ নিজে অপরিচিতের কাছে মাদক বিক্রি করত না। তাই গাঁজা নিয়ে হাজারিবাগ যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ, ওই এলাকায় কোনও পুরনো মাদক চক্রের কাছেই ওই মাদক পৌঁছচ্ছিল।
শনিবার ইমতিয়াজকে আদালত ৩০ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের বাকি চাঁইদের খোঁজ শুরু হয়েছে। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই চক্রে বাহরুদ্দিন নামে আরও এক জনের নাম উঠে এসেছে। বছর দুয়েক আগে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো তাকে গ্রেফতার করলেও জামিন পেয়ে বাহরুদ্দিন এখন জেলের বাইরে রয়েছে। এ রাজ্য ছাড়া বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাতেও সে মাদক পাচারে জড়িত বলে গোয়েন্দাদের দাবি।