কর্তব্যরত পুলিশকে নিগ্রহ, গ্রেফতার দম্পতি

মাঝখানে বন্ধ ছিল কিছু দিন। পুজোর মুখে বেপরোয়া যান শাসনে পুলিশ কড়া হতেই ফের সেই ঘটনা। রাজপথে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার পুনরাবৃত্তি। এ বার এক ট্রাফিক সার্জেন্টের বুকে সাঁটা নেমপ্লেট পর্যন্ত ছিঁড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

মাঝখানে বন্ধ ছিল কিছু দিন। পুজোর মুখে বেপরোয়া যান শাসনে পুলিশ কড়া হতেই ফের সেই ঘটনা। রাজপথে পুলিশের নিগৃহীত হওয়ার পুনরাবৃত্তি। এ বার এক ট্রাফিক সার্জেন্টের বুকে সাঁটা নেমপ্লেট পর্যন্ত ছিঁড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। তার সঙ্গে পুলিশকে কাজে বাধা দিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি তো আছেই। শনিবার মাঝ রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পার্ক স্ট্রিট ও ক্যামাক স্ট্রিটের মোড়ে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সার্জেন্টকে হেনস্থা করার ঘটনায় অভিযুক্ত এখানে এক জন নন, বরং এক দম্পতি। অভিযুক্তদের অবশ্য ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

Advertisement

পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড করে দ্রুত গতিতে চলা বা সন্দেহজনক গাড়ি মনে হলেই তাদের আটকে পরীক্ষা চলছিল। দু’রকম পরীক্ষা। এক, ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে দেখা, চালক মত্ত অবস্থায় কি না। দুই, গাড়িতে আপত্তিকর বা বিপজ্জনক কিছু আছে কি না, তা তল্লাশি করে দেখা। সমস্যা নজরে পড়লে র‌্যাশ ড্রাইভিংয়ের মামলাও রুজু করা হচ্ছিল।

রাত তখন পৌনে ১২টা। পুলিশ জানায়, সেই সময়ে পার্ক স্ট্রিট থেকে ক্যামাক স্ট্রিটের দিকে প্রচণ্ড গতিতে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। ওই মোড়েই গার্ডরেলের ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকে পরীক্ষা চলছিল। পুলিশ ওই সেডানটি আটকায়। তার পরে গাড়ির চালক-সহ তিন আরোহীকে ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা করতে যায় এবং চালককে জিজ্ঞাসা করে, অতটা গতিতে তিনি কেন গাড়ি চালাচ্ছিলেন? গাড়ির চালক পুরুষ আর বাকি দুই আরোহী ছিলেন মহিলা।

পুলিশ জানায়, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন অধিরাজ মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী স্নেহা মিরচন্দানি মুখোপাধ্যায় এবং আর এক মহিলা। পুলিশের দাবি, টালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তখন মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জায়গায় যান শাসনের দায়িত্বে তখন ছিলেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট সন্দীপ রায়। ওই দম্পতির মারমুখী মেজাজ দেখে সন্দীপবাবু খবর দেন ওই ট্রাফিক গার্ডের অতিরিক্ত ওসি বিভাস মণ্ডলকে। বিভাসবাবু ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁর সঙ্গেও ওই দম্পতি বচসা জুড়ে দেন বলে অভিযোগ পুলিশের। পুলিশের অভিযোগ, এরই মধ্যে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে বাকি পুলিশকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। সেই সময়ে সার্জেন্ট সন্দীপ রায়ের বুকে সাঁটা নেমপ্লেটটিও তাঁর ইউনিফর্ম থেকে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মত্ত অবস্থায় দু’জনেই সার্জেন্টের উর্দি ধরে টানাটানি করছিলেন।’’ সেই সময়ে অন্য পুলিশকর্মীরা ওই মারমুখী দম্পতিকে কোনওক্রমে নিরস্ত করেন।

রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে ধৃত দম্পতিকে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের দু’দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে কর্তব্যে বাধাদান ও মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, গাড়িতে উপস্থিত তৃতীয় জন ওই ঘটনায় জড়িত নন বলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উৎসবের মরসুম শুরুর মুখে শহরে দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিপি-র নির্দেশে শুক্রবার রাত থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন সাউথ, সাউথ-ইস্ট ও ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা। প্রথম রাতেই নিয়ম ভাঙার অভিযোগে ধরা পড়েছিল বেশ কিছু দেশি-বিদেশি গাড়ি, আর দ্বিতীয় রাতেই এই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন