সজ্জা: আলোকের এই ঝর্নাধারায়...। ধোপাপুকুরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
নামেই ছিল পার্ক। অবস্থা রীতিমতো ভাঙাচোরা। আর তাকে ঘিরে ছিল একটা বড় পুকুর। স্থানীয় মানুষজনের কাছে বহু বছর ধরে পুকুরটির পরিচয় ধোপা পুকুর নামে। ধোপাদের কাপড় কাচা অবশ্য সেখানে এখন আর হয় না। পুকুরটিতে এখন সারা বছর ধরে মাছ চাষ হয়। আর যে কোনও উৎসবে সেখানে প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দমদমের সেই ধোপা পুকুরই এখন এলাকাবাসীর কাছে অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান হয়ে উঠেছে। ভগ্নদশা ঘুচিয়ে পার্ক ও পুকুরটিকে নানা ভাবে সাজিয়ে তুলেছে দমদম পুরসভা। আর সেই কাজে সাহায্য করেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এবং দমদম পুরসভা মিলে এই সৌন্দর্যায়নের কাজে খরচ করেছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। তাঁর দাবি, আশপাশের আরও কয়েকটি পার্ককে তাঁরা নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলবেন।
ধোপা পুকুর পার্কে এখন হকার নেই, উধাও নোংরাও। সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢেকে গিয়েছে পার্কের জমি। সুন্দর টাইল্স দিয়ে পাকা করে দেওয়া হয়েছে চলার রাস্তা। প্রবীণদের বসে আড্ডা মারার জন্য তৈরি ছোট্ট গোলঘর। এ ছাড়াও পার্কের মধ্যেই ছোটদের জন্য রয়েছে দোলনা, ঢেঁকি-সহ বিভিন্ন ধরনের খেলার ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য বসানো হয়েছে শারীরচর্চা করার নানা যন্ত্র। যাকে বলা হচ্ছে মুক্ত জিম।
তবে সৌন্দর্যায়নের এই কাজে সব চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ধোপা পুকুরের ফোয়ারা। সন্ধ্যা হলেই পুকুরের জলে শুরু হচ্ছে আলো-ধ্বনি সহযোগে মনোরম প্রদর্শনী। সেখানে ফুটে উঠছে মাইকেল মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মতো বাংলার মনিষীদের ছবি। পাঠ হচ্ছে তাঁদের বাণী ও জনপ্রিয় রচনাগুলি। প্রতি সন্ধ্যায় সেই প্রদর্শনী দেখতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ।
ওই অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা দুলাল দেব। রোজ সকালে পার্কের জিমে ঘণ্টা দু’য়েক শারীরচর্চা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই নানা কারণে জিমে যেতে পারেন না। পার্কে এসে বহু লোক এখন সকালের দিকে জিম করছেন।’’ প্রবীণদের মধ্যেও অনেকে এই মুক্ত জিম নিয়ে উৎসাহী বলে জানিয়েছেন দুলালবাবু।
স্থানীয় মানুষরাও জানাচ্ছেন, সংস্কারের পরে পার্কটিতে এখন গিয়ে বসতেও ভাল লাগছে। শীতের দুপুরে আশপাশের অনেক মহিলাও গোলঘরে বসে আড্ডা মারছেন। সকালে যাঁরা হাঁটতে যান, তাঁদের অনেকেই অন্য রাস্তা ছেড়ে ধোপা পুকুরে যেতে শুরু করেছেন।