উত্তর কলকাতার সরু গলি।
বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে সেখানকার অপ্রশস্ত ঢোকা-বেরোনোর পথ দেখে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই উদ্যোক্তাদের নির্দেশ দেন ওই রাস্তা আরও বড় করতে।
শুধু ওই পুজোই নয়, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে এমন আরও কিছু মণ্ডপ রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন সদ্য ঠাকুর দেখে ফেরা দর্শনার্থীদের একাংশ। পঞ্চমীর রাতে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে উত্তর কলকাতার একটি বড় পুজোয় একই কারণে রীতিমতো আতঙ্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন এক পরিবারের চার সদস্য। ফলে দু’টি প্রশ্ন উঠছেই। প্রথমত মণ্ডপগুলি তৈরি হয় প্রচুর দাহ্য বস্তু দিয়ে। আগুন লাগলে ওই সঙ্কীর্ণ পথ দিয়ে দর্শনার্থীরা বার হতে পারবেন কি? দ্বিতীয়ত, মণ্ডপগুলিতে আগুন নেভানোর জন্য অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও উদ্যোক্তাদের তা চালানোর কোনও প্রশিক্ষণ রয়েছে কি?
পুলিশ ও দমকলের দাবি, শহরের বড় পুজো মণ্ডপগুলি নিয়ম মেনেছে কি না তা পরিদর্শন করে দেখে তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ঢোকা-বেরোনোর পথ কী হবে তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা হয় পুজো কমিটিগুলিকে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রুখতে মণ্ডপে অগ্নিরোধক বিশেষ রাসায়নিকের প্রলেপ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দমকলের দাবি, পুজো কমিটিগুলি তা নিজেদের স্বার্থেই করে। কিন্তু বাস্তবে কতটা নিয়ম মেনে পরিদর্শন করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দর্শনার্থীদের একাংশের মতে, উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বড় পুজো হয় গলিতে। সে ক্ষেত্রে কোন আইনে ওই পুজোগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হয়? তাঁদের দাবি, সঙ্কীর্ণ ওই পথ দিয়ে বার হওয়া কার্যত অসম্ভব। এমনকি কোথাও গেট বড় হলেও ভিতরে বিভিন্ন জিনিস থাকায় ওই পথ অপ্রশস্ত হয়ে যায়।
যদিও এক দমকল কর্তার উত্তর, যে সব পুজোয় ভিড় হয় সেগুলো ভাল করে পরিদর্শন করে তবেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয় থানার তরফে প্রতিটি পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। সরু রাস্তা কিংবা মাঠ, সব জায়গায় নিয়ম মেনে এবং যথা সম্ভব ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা করেই মণ্ডপ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়।
পুজো কমিটিগুলির যৌথ সংগঠন, ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের যুগ্ম সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘পুজো করতে দমকলের অনুমতি লাগে। নির্দিষ্ট সুরক্ষা বিধি মানলে তবেই অনুমতি মেলে।’’ দক্ষিণ কলকাতার এক পুজোকর্তা দাবি করেন, তাঁদের মণ্ডপে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে। যা চালানোর মতো প্রশিক্ষিত কর্মীও তাঁদের রয়েছে।
পুলিশের একাংশের মত, ভিড়ে দর্শনার্থীদের লাইন অনেক সময়ে দীর্ঘ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যায়, লাইন যেখানে পৌঁছেছে সেখানে রাস্তা বা ফুটপাথ সঙ্কীর্ণ। ফলে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সাময়িক সমস্যা হয়।