slum dwellers

Dengue: ঘরের টাকা আটকে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে মাঠেই পোড়া বস্তির বাসিন্দারা

আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল বস্তির প্রায় ৯০০ বাসিন্দার ঘর। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছিলেন।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:০২
Share:

‘ঘর’কন্না: প্লাস্টিক ও ত্রিপলের নীচে ঘেঁষাঘেঁষি করে এখনও বাস হাজার বস্তির বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার, বাগবাজারের নিবেদিতা উদ্যানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল বস্তির প্রায় ৯০০ বাসিন্দার ঘর। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে বলে কথা দিয়েছিলেন। কাউন্সিলর ঘোষণা করেছিলেন, বাগবাজারের পুড়ে যাওয়া হাজার বস্তি নতুন করে তৈরি হলে নাম রাখা হবে ‘মমতা কলোনি’। কিন্তু এক বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও হাজার বস্তির বাসিন্দারা এখনও দিন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে, ত্রিপল টাঙিয়ে। বর্ষায় বেড়ে ওঠা মাঠের ঝোপ-জঙ্গলে সাপের ভয় তো আছেই, বস্তির তিন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ম্যালেরিয়া হয়েছে আট জনের। তাঁরা সকলেই হাসপাতালে ভর্তি। আদতে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি!

Advertisement

২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভয়াল আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল বাগবাজারের হাজার বস্তির কয়েকশো ঘর। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল মায়ের বাড়ির একাংশেও। বস্তির ঠিক উল্টো দিকে পেট্রল পাম্প থাকায় আরও বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। আগুন নেভার পরে বস্তির বাসিন্দাদের ঠাঁই হয় পাশেই উইমেন্স কলেজে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বস্তির বাসিন্দাদের জন্য পাকা ঘর বানিয়ে দেবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ওই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ঘর তৈরির জন্য কত খরচ হতে পারে, সেই হিসাব দেওয়ার জন্য বলা হয় কাউন্সিলর বাপি ঘোষকে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বাগবাজারের শ্রমজীবী কলোনির সাবেক ঠিকানা পি-২৭, ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউ। পরবর্তী কালে এই জায়গাটিরই নাম হয় ‘হাজার বস্তি’। সেখানে ১০ কাঠা জমির উপরে তেতলা থাকার জায়গা তৈরি করতে প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে স্থানীয় পুর প্রশাসকের তরফে জানানো হয়েছিল নগরোন্নয়ন দফতরে। তার মধ্যে সরকার মঞ্জুর করে ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। এর পরেই ওই বস্তি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেখানকার ১০৬টি পরিবারকে কাছেই নিবেদিতা উদ্যানে থাকার ব্যবস্থা করে দেন কাউন্সিলর। বাঁশ বেঁধে, তার উপরে ত্রিপল এবং প্লাস্টিক পেতে তৈরি করা হয় ছোট ছোট ঘর।

Advertisement

কিন্তু প্রায় এক বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও বস্তির বাসিন্দারা এখনও দিন কাটাচ্ছেন মাঠের সেই অস্থায়ী ঘরে। এখন বস্তির জায়গায় দোতলা পাকা বাড়ি উঠেছে। তেতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হলে সেখানে সব মিলিয়ে ৩১৮টি ঘর হওয়ার কথা।

বর্তমানে মাঠে দিন কাটানো, বস্তির এক বাসিন্দা সমীর মণ্ডল বললেন, ‘‘এক বাঁশ আর প্লাস্টিকে কি এত দিন চলে? এখন বর্ষায় বৃষ্টিতে সব ভেঙে পড়ছে। এর সঙ্গে রয়েছে সাপের উপদ্রব।’’ আর এক বাসিন্দা সঞ্জীব ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘বৃষ্টিতে মাঠে জল জমে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে জ্বর। অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে গেলেই হয় ডেঙ্গি, নয়তো ম্যালেরিয়া ধরা পড়ছে। আগুন থেকে বেঁচেছি। এ বার রোগে একটা মৃত্যু না ঘটলে হয়তো ঘর পাব না।’’

কাউন্সিলর নিজেই জানালেন, বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে বলে তাঁর কাছে নিশ্চিত খবর রয়েছে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত আট জন। মাঠের ওই বসতি থেকে আশপাশেও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে অভিযোগ করছেন অন্য বাসিন্দারা। বাপির কথায়, ‘‘কিন্তু আমি নিরুপায়। সরকার যে ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছিল, তার মধ্যে ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা এসেছিল। তার পরে আর টাকা আসেনি। সরকার টাকা না পাঠালে আমিই বা কী ভাবে ঘর তৈরি করে দেব?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমরা আরও প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকার ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। সেই টাকাটা এলেও অন্তত ঘরের কাজ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বুঝিয়েছি। মাঠের ঘাস কাটার এবং ঘরগুলিতে ওষুধ বিলি করার পাশাপাশি আরও কী কী করা যায়, দেখছি। কিন্তু ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেলে কী ভাবে সামলাব জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন