অনন্যা কোনার সাঁই
প্রাচ্য সমাজে কখনও মেয়েদের জন্য শ্বশুরবাড়ির খুব একটা আহ্লাদের ছবি ছিল না। একটি মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া মানেই পরদিন থেকে সে কিছু দায়িত্ব নেবে। সেটা হেঁসেলের হোক বা অন্য কিছুর। সেই ভাবনা থেকে এখন অনেকটাই এগিয়েছে সমাজ। এখন আর বিবাহিতা মহিলাদের একমাত্র কাজ হেঁসেল সামলানো নয়। মেয়েরাও বাড়ির বাইরের জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছে। এখন আর মেয়েরাও শুধু সংসার করার জন্য বিয়ে করে না। কিন্তু তাই বলে যে শ্বশুরবাড়ির চেহারাটা বদলে গিয়েছে, তেমন তো নয়। এখন লেখাপড়া জানা মেয়ে যদি চাকরি না করে, তা হলে ছেলের পরিবারের লোকেদের মনে হয় মেয়েটি বুঝি কোনও কাজেই লাগছে না। মনে হয়, পরের বাড়ির মেয়ে এসে তাঁদের বাড়ির ভাতে ভাগ বসাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষই চায়, বাড়ির বৌমা চাকুরিরতা হোক। তা হলে তাঁদের ছেলের উপরে একটু কম চাপ পড়বে। ছেলের কষ্ট অর্জিত টাকায় বৌমা সুখে থাকবে, তা মেনে নিতে পারে না। আসলে গোটা দুনিয়াটাই অনেক বস্তুবাদী হয়ে গিয়েছে। এখন সব কিছুই ভাগাভাগি হয় তার বাজারদরের ভিত্তিতে। সম্পর্ক শুধু আবেগে কখনওই চলত না। কিন্তু এখন আবেগ প্রায় দেখাই যায় না। তাই সুখ কমছে সম্পর্কে। মেয়েদের উপরে সেই শ্বশুরবাড়ির চাপিয়ে দেওয়া দায় থেকেই যাচ্ছে। আগে শুধু ঘরে থাকত, এখন ঘর-বাইরে দু’জায়গাতেই থাকে।
তবে যে মেয়েরা সেই চাপ নিতে না পেরে মৃত্যু বেছে নিচ্ছে, তাদের সমর্থন করি না। তারা আসলে মানসিক ভাবে দুর্বল, তাই তারা এই পথ বেছে নিচ্ছে। না হলে স্বামীর সঙ্গে সমস্যা হলে সেই বাড়ি ছেড়ে তো বেরিয়েও যাওয়া যায়। অনেকেই বলবেন, ওরা নিজেদের বাবা-মায়ের ঘরে ফিরে যেতে লজ্জা পায়। মনে করে, বাবা-মায়ের উপরে চাপ বাড়বে। যে নিজেকে বাবা-মায়ের বোঝা ভাবতে পারে, সে তো দায়িত্ব নিতেই জানে না।
আসলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াই এখনকার সবচেয়ে বড় সমস্যা। ছেলে-মেয়ে, দু’পক্ষেরই। অনেকেই বলতে পারে যে ছেলেদের উপরেও উপার্জন করার চাপ থাকে। কিন্তু সেটা তার সামাজিক পরিচয়ও বটে। তাই সেই চাপ নিতে তার অসুবিধে হয় না। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন নয়। তাই আয় করার ভার জোর করে চাপিয়ে দিলে তার মেনে নিতে বেশি কষ্ট হয়।
বিয়ের সম্পর্কেও যেন শুধুই সুখ খোঁজে দু’পক্ষ। শুধুই কী পাওয়া গেল, তার হিসেব। নিজে কী দিলাম, সেটাই যে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে, তা কারও মনেই আসে না। ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। কেউ কেউ ভেঙে পড়ছে, কেউ একেবারেই হেরে যাচ্ছে।
(লেখিকা মনোবিদ)