জিএসটি-র গেরোয় সারা শহরে থমকে পুর-সংস্কার

টানা বৃষ্টিতে শহরের বহু রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সামনেই পুজো। তা সারানোর কাজ এখনই শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই টেন্ডারের কাজ আটকে রয়েছে সরকারি শিডিউলের গেরোয়।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ১০:৫০
Share:

জিএসটি-র ধাক্কায় বেহাল পুরসভার কাজকর্ম।

Advertisement

পয়লা জুলাই থেকে দেশ জুড়ে জিএসটি চালু হলেও তার প্রয়োগ নিয়ে কোনও সার্কুলার পুরসভার হাতে এখনও নেই। যার ফলে জল সরবরাহ, রাস্তা সারাই ও নির্মাণ, নিকাশি, জঞ্জাল সাফাই, আলোর কাজ-সহ যে সব কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয়, তা আটকে যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে জরুরি কিছু কাজের ক্ষেত্রেও। থমকে যাচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজও

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, পুরসভার বিভিন্ন দফতরের কাজ হয় রাজ্য সরকারের (পূর্ত দফতরের) ‘শিডিউল’ মেনে। সেই শিডিউলের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে ভ্যাট-সহ একাধিক কর। আর টেন্ডারও ডাকা হয় সেই শিডিউল অনুযায়ী। কিন্তু জিএসটি আসায় সে সব কর উঠে গিয়েছে। বলা হয়েছে, এ বার থেকে কেবল জিএসটি যোগ করা হবে। স্বভাবতই পূর্ত দফতরের সেই শিডিউল তো আর প্রামাণ্য বলে মনে করা যাচ্ছে না। এর ফলে টেন্ডার ডাকায় সমস্যা বেড়েছে।

Advertisement

জিএসটি-বিভ্রাটে পুরসভার বিভিন্ন কাজ আটকে থাকায় বিভিন্ন বরো থেকে প্রতিনিয়ত অভিযোগ উঠছে। উত্তর কলকাতার ২, ৩ ও ৬ নম্বর বরোর একাধিক ইঞ্জিনিয়ার জানান, বর্ষার সময়ে রাস্তা সারাই থেকে জল সরবরাহ, অনেক কাজ করতে হয়। কিন্তু টেন্ডার ডাকা যাচ্ছে না। একই অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ কলকাতার ৮, ৯, ১০ ও ১২ নম্বর বরো থেকেও। পুরসভার এক ডিজি জানান, এ বার বর্ষায় বৃষ্টির পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেশি। টানা বৃষ্টিতে শহরের বহু রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সামনেই পুজো। তা সারানোর কাজ এখনই শুরু করে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই টেন্ডারের কাজ আটকে রয়েছে সরকারি শিডিউলের গেরোয়।

আরও পড়ুন: বাড়ির পরে লোকাল ট্রেন, ফের উদ্ধার বেআইনি অস্ত্র

শহরে রাস্তার কাজে যুক্ত এক ঠিকাদারের কথায়, ‘‘পুরনো শিডিউল থেকে ভ্যাট উঠে গিয়েছে। এখন জিএসটি-র ফলে কত টাকা কর দিতে হবে, তা না জেনে কী করে টেন্ডারের জন্য আবেদন করব?’’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ধরা যাক, একটি কাজ এক কোটি টাকার। জিএসটি বাবদ যদি আগের শিডিউলের থেকে আট শতাংশ বেশি কর দিতে হয়, তা হলে তো অতিরিক্ত আট লক্ষ টাকা মেটাতে হবে।’’ আগে থেকে জানলে একটা প্রস্তুতি থাকে। তাই নতুন শিডিউল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কাজ করা ঝুঁকির।

কী করছে পুর প্রশাসন?

পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কমার্শিয়াল ট্যাক্স দফতরের অফিসারেরা দু’দফায় কলকাতা পুর প্রশাসনের সব ডিজি এবং পদস্থ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাতে খুব একটা কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন না একাধিক ডিজি এবং বরো চেয়ারম্যান। যদিও পুরসভার এক আমলা জানান, বিষয়টি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে পুরসভার ডেপুটি মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসারকে জিএসটি বিষয়ক নোডাল অফিসার করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে পুর প্রশাসনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডারের কাজ চালাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের কাছে জিএসটি যুক্ত করে দ্রুত নতুন শিডিউল তৈরির আর্জিও জানানো হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরেও চিঠি পাঠিয়েছে পুর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন