ছেলের কঠিন রোগ, দম্পতি ‘আত্মঘাতী’

বিধাননগর পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগরে একটি বহুতলের চার তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল ওই দম্পতির ঝুলন্ত দেহ। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে রঞ্জিত দাস (৬৭) এবং মমতা দাস (৫৭) নামে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

একমাত্র ছেলে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। ২০০৮ থেকে ছেলের সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। চিকিৎসার ব্যয়ও বিপুল। নিজের রোজগারের একমাত্র উপায় গয়নার দোকানও বিক্রি করে দিয়েছিলেন শান্তিনগরের বাসিন্দা ওই দম্পতি। দুই মেয়ে এবং জামাইরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিবেশীরাও সাধ্যমতো মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

Advertisement

বিধাননগর পুরসভার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগরে একটি বহুতলের চার তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল ওই দম্পতির ঝুলন্ত দেহ। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে রঞ্জিত দাস (৬৭) এবং মমতা দাস (৫৭) নামে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দেখা যায়, ফ্ল্যাটের দু’টি ঘরের একটিতে বিছানার উপরে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে রঞ্জিতবাবুর দেহ। তাঁর পরনে সাদা জামা ও কালো প্যান্ট।

Advertisement

বিছানায় পড়ে তাঁর স্ত্রী মমতাদেবীর নিথর দেহ। তাঁর কপাল জুড়ে সিঁদুর, পায়ে আলতা। রঞ্জিতবাবুর হাতেও লেগে ছিল সিঁদুর।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দম্পতির দুই মেয়েকে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই চিঠিকেই সুইসাইড নোট হিসেবে ধরে নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর,

চিঠির বয়ান অনুসারে, ওই দম্পতি তাঁদের দুই মেয়েকে ফ্ল্যাটটি দিয়ে দিলেন। তাঁদের ছেলেকে যেন রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁরা আর কোনও চিন্তা-ভাবনা করতে পারছেন না। নাতি-নাতনিদের অনেক ভালবাসা জানিয়েছেন তাঁরা। তদন্তকারীরা জানান, ওই দম্পতির মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তার প্রমাণ চিঠিটি।

ওই দম্পতির ছোট মেয়ের স্বামী অনির্বাণ দাস জানান, রঞ্জিতবাবুর ছেলে অভিজিৎ স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। রঞ্জিতবাবুর এক ভাইও ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে অভিজিতের সমস্যা বাড়তে থাকে। চিকিৎসার বিপুল খরচ মেটাতে নিজের গয়নার দোকানও বিক্রি করে দেন রঞ্জিতবাবু। তখন থেকেই ওই দম্পতি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। কিছু দিন আগেই বছর পঁচিশের অভিজিৎ হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছিলেন। এ দিন তিনিই ঘুম থেকে উঠে পাশের ঘরে বাবা-মাকে ওই অবস্থায় দেখেন। তার পরে তিনি প্রতিবেশীদের ঘটনাটি জানান। প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন।

অনির্বাণ এ দিন বলেন, ‘‘কতবার বলেছি খরচ নিয়ে চিন্তা কোরো না। আমরা দেখব। পড়শিরাও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওঁরা ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তা বলে এমন ঘটনা ঘটবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ অভিজিৎ এখন বেলেঘাটায় ছোট দিদির কাছেই রয়েছেন। শান্তিনগরের ওই বহুতলের এক বাসিন্দা রাজু সেন জানান, রঞ্জিতবাবু খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। ছেলের চিকিৎসা নিয়ে খুবই উদ্বেগে থাকতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়না-তদন্তের পরেই ওই দম্পতির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে যে ভাবে মমতাদেবীর কপালে এবং পায়ে সিঁদুর, আলতা মাখানো হয়েছে তাতে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই রঞ্জিতবাবুর মৃত্যু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন