কাদম্বরীকে ‘মরিয়া’ প্রমাণ করতে হয়েছিল সে বেঁচে ছিল। এ কালে নির্বাচন কমিশন তাকেও হার মানাল। তাদের কেতাবের ফরমান অনুযায়ী, মৃত ভোটারকে কার্যত সরেজমিন হাজির হয়ে ভোটকর্তাদের বোঝাতে হবে সত্যিই তিনি মারা গিয়েছেন!
সৌজন্যে টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনী অফিস।
নাকতলার বাসিন্দা রুমা দাশগুপ্তের স্বামী সুব্রত দাশগুপ্ত মারা গিয়েছেন ২০১২ সালের ৩ জুন। স্বামীর নামটি ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি আবেদন করেছিলেন তিনি। দিন কয়েক আগে তাঁদের বাড়িতে টালিগঞ্জ কেন্দ্রের ওই দফতর থেকে একটি চিঠি আসে। চিঠিতে রুমাদেবীর নাম নেই। শুধু সুব্রতবাবুর নাম উল্লেখ করে লেখা ছিল, ১৪ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে ৪টের মধ্যে নাম, ঠিকানা-সহ পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্ক, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ, জীবনবিমা-সহ নানা ধরনের প্রমাণপত্র নিয়ে আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের অফিসে হাজিরা দিতে হবে। অন্যথায় তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে।
চমকিত হলেও নির্ধারিত দিনে হাজিরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রুমাদেবী। তাঁর মনে হয়েছিল, মৃত্যুর ভুয়ো তথ্য নথিভুক্ত করা আটকাতেই হয়তো এই ব্যবস্থা। তখনও জানা ছিল না, আরও কত গুণ চমক তাঁর অপেক্ষায়!
বুধবার নির্দিষ্ট দিনে, নির্ধারিত সময়ে আলিপুরের ওই দফতরে পৌঁছন ৫৮ বছরের রুমাদেবী। সেখানে তখন টেবিল পেতে বসে দুই ব্যক্তি— এক জন অল্পবয়সী, অন্য জন প্রৌঢ়। তাঁদের কাছেই নথিপত্র জমা দিতে হবে। রুমাদেবী তাঁদের কাছে পৌঁছে চিঠিটি দেখাতেই হাতে একটি ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে তাঁরা বললেন, পূরণ করে দিন। সেই ফর্ম তিনি পূরণ করবেন কি না জানতে চাইতেই অল্পবয়সী যুবকটির সটান জবাব, ‘‘না না, যাঁর নামে চিঠি, তাঁকেই পূরণ করতে হবে।’’ কিন্তু তিনি তো মারা গিয়েছেন! তড়িঘড়ি ডেথ সার্টিফিকেট দেখাতেই ফের চমক! পাশের প্রৌঢ় ব্যক্তি কিছু একটা বলার আগেই ওই যুবক ফের বললেন, ‘‘তা হলে আপনি সুব্রত দাশগুপ্ত হিসেবে ফর্ম পূরণ করে দিন, নীচে ‘ফর’ দিয়ে সই করে দেবেন।’’ শেষমেশ অবশ্য খানিক তর্কাতর্কি করে সুব্রতবাবুর স্ত্রী হিসেবেই তথ্য দাখিল করে ফর্মটি পূরণ করেন রুমাদেবী।
রাতে বিষয়টি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তকে জানানো হলে হেসে ফেলেছেন তিনিও। তবে তাঁর যুক্তি, কারও মৃত্যুর খবর দিয়ে ভুয়ো আবেদন করা হয়েছে কি না, যাচাই করতেই তাঁর নামে চিঠি দিয়ে উপস্থিত হতে বলার এই ব্যবস্থা। সেই সঙ্গেই সুনীলবাবু বলেছেন, ‘‘ওই ছেলেটি হয় নিজে পুরোটাই ভুল বুঝে কাজ করছে, কিংবা ভুল বুঝিয়েছে। আমাদেরও এই বিষয়ে চিঠি এবং ফর্মের বয়ান যথাযথ করার কথা ভাবতে হবে।’’
রুমাদেবীর বাড়িতে আসা সেই চিঠিতে সুব্রতবাবুর নামের নীচে অবশ্য এখনও জ্বলজ্বল করছে, ‘প্রেজেন্ট ইন হিয়ারিং’।
মৃতের মর্তে আগমন!