চোরাই সোনায় গয়না তৈরির রমরমা সিঁথিতে

শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ তোলার সোনার বিস্কুট বা এক কিলোগ্রামের যে বড় বার চোরাই পথে কলকাতায় আসছে, তার উপরে বিদেশি ছাপ থাকে। বনগাঁ এবং বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে ঢুকে ট্রেনে করে ছোট বিস্কুট চলে আসছে দমদম স্টেশন পর্যন্ত। সেখান থেকে সিঁথির আমবাগান এলাকায় পৌঁছতে লাগে মিনিট দশেক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনার বিস্কুট। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

চোরাপথে সোনা এনে ছোট ছোট কারখানায় গয়না তৈরি হচ্ছে সিঁথির বেশ কিছু এলাকায়। মঙ্গলবার শুল্ক দফতরের প্রিভেন্টিভ শাখার অফিসারেরা এমনই একটি ছোট কারখানায় হানা দিয়ে ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকার সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে। প্রিভেন্টিভ শাখার কমিশনার পার্থ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত সোনা সবই ২৪ ক্যারাটের। এবং তা বিস্কুটের আকারে। এক-একটি বিস্কুটের ওজন ১১৬ গ্রাম। বিদেশে এই ওজনের সোনার বিস্কুটকে ১০ তোলার বিস্কুট বলা হয়। সব মিলিয়ে ৩ কিলোগ্রাম ৮৫১ গ্রাম সোনা। ওই কারখানার ম্যানেজার যোগেশ অঙ্কুশ ডাঙ্গেকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতে তোলা হয়েছে। কারখানার মালিক পলাতক। এই সোনা বাংলাদেশ থেকে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় এসেছে বলে শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

এর আগে গত ২৫ অগস্ট রাতে হাওড়া স্টেশনে হানা দিয়ে এই শাখার অফিসারেরাই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা দুই যুবকের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার চোরাই সোনা বাজেয়াপ্ত করেন। ওই দুই যুবক এখন কারাগারে বন্দি। এক কিলোগ্রাম ওজনের একটি বার ছিল তাদের কাছে। শুল্ক অফিসারেরা জানিয়েছেন, মূলত মায়ানমার থেকে এই ধরনের বড় বার পাচার হয়ে ভারতে ঢুকছে। ছোট বিস্কুট ঢুকছে বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে। সে দিন ওই দেড় কোটি টাকার সোনা নিয়ে রাতের ট্রেনে ইলাহাবাদে যাওয়ার কথা ছিল ওই দুই যুবকের।

শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ তোলার সোনার বিস্কুট বা এক কিলোগ্রামের যে বড় বার চোরাই পথে কলকাতায় আসছে, তার উপরে বিদেশি ছাপ থাকে। বনগাঁ এবং বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে ঢুকে ট্রেনে করে ছোট বিস্কুট চলে আসছে দমদম স্টেশন পর্যন্ত। সেখান থেকে সিঁথির আমবাগান এলাকায় পৌঁছতে লাগে মিনিট দশেক। সেখানেই চলে ওই সমস্ত কারখানা। এই এলাকাটিকে এখন ‘মিনি বড়বাজার’ নামেও ডাকা হয়। শুল্ক অফিসারদের কথায়, ‘‘চোরাই কারবার বন্ধ করতেই ভারতে ১১৬ গ্রাম বা ১০ তোলা ওজনের সোনার বিস্কুট কেনাবেচা নিষিদ্ধ।’’

Advertisement

সিঁথির ওই এলাকার বেশ কিছু কারখানায় এমন যন্ত্র রয়েছে, যার সাহায্যে সেই বিস্কুটের উপর থেকে বিদেশি ছাপ মুছে স্থানীয় সংস্থার ছাপ মেরে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বাজারে তা বেরিয়ে গেলে কারও কোনও সন্দেহ না হয়। কয়েকটি কারখানায় সেই সোনা গলিয়ে ফেলে তা থেকে গয়না তৈরি হচ্ছে, যা মূলত বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন গয়নার দোকানে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুল্ক-কর্তারা জানিয়েছেন, এ ভাবে বাংলাদেশ বা মায়ানমার থেকে চোরাই সোনা এনে কলকাতা তথা ভারতের বাজারে ছেড়ে দিয়ে কিলোগ্রাম প্রতি তিন লক্ষ টাকা মুনাফা করছে চোরাকারবারিরা।

শুল্ক অফিসারেরা জানিয়েছেন, সিঁথির ওই সব কারখানায় অনেক সময়ে গোটা আটেক ১০ তোলার বিস্কুট গলিয়ে এক-একটি এক কিলোগ্রামের বারও বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। সেই বারের উপরে কারও নাম থাকছে না। সেই বার বাজারে বেরিয়ে গেলে তা ধরা মুশকিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন