KMC election 2021: ‘পঞ্চাশ নয়, পাঁচ বছরের পরিকল্পনাটা আগে হোক’

বেহাল নিকাশির কারণেই ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশে নতুন করে জল জমছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান ও চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪৭
Share:

বহেলা: মাটির উপরে ত্রিপলের ছাউনি টাঙিয়ে চলছে কেওড়াপুকুর বাজার। ছবি: সুমন বল্লভ।

একেই বোধহয় বলে, উন্নয়নের গুঁতো।

Advertisement

এলাকায় জল জমা রুখতে ভূগর্ভে নিকাশি নালা তৈরির কাজ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। সেই কাজের জন্য রাস্তা জুড়ে খোঁড়াখুঁড়িতে তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা এ বার জানতে চান, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

টালিগঞ্জের করুণাময়ী মোড় থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে একটু এগোলেই নস্করপাড়া মোড়। সেখান থেকে নস্করপাড়া রোড ধরে খানিকটা গেলেই দেখা যায় রাস্তার সেই খোঁড়াখুঁড়ি। এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত নাথ বললেন, ‘‘গত এক বছরে কত বার যে কাজ বন্ধ হল! গলি দিয়ে গাড়ি ঢুকতে পারে না। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জেরে লোকজন প্রায়ই হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। কাদা-জলে পা পিছলে যাচ্ছে। রাস্তার দু’ধারে যাঁদের বাড়ি, তাঁরা গাড়ি বার করতে পারেন না।’’ এলাকার এক ব্যবসায়ীর কথায়, “রাস্তার এই হাল হওয়ায় এখান দিয়ে লোকের আনাগোনা কমে গিয়েছে। তাই দোকানে বিক্রিবাট্টাও কম। পাইপলাইনের কাজ কবে যে শেষ হবে, জানি না।’’

Advertisement

স্থানীয় ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শুভঙ্কর বাগচীর কথায়, ‘‘জল জমার সমস্যা মেটাতে পুর প্রতিনিধিরা যদি সত্যিই ইচ্ছুক হতেন, তা হলে কাজে এত দেরি হত না। ওই নিকাশি নালা তৈরি হলে জল জমা বন্ধ হবে তো?’’ বিদায়ী ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর রত্না শূরের অবশ্য দাবি, ‘‘কেইআইআইপি-র এই কাজ অবিলম্বেই শেষ হবে। তার পরে এলাকায় আর জল জমবে না।’’ এলাকাবাসী অবশ্য কোঅর্ডিনেটরের এই দাবি নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান। মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে একটু এগিয়ে কেওড়াপুকুর বাজারের পাশেই কেওড়াপুকুর খাল। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই খালের নাব্যতা প্রায় কিছুই নেই। বর্ষায় জ‌ল উপচে পড়ে। খালের সংস্কার না করলে জল জমার সমস্যা কমবে কী ভাবে?’’

১৩ নম্বর বরোর ১১৫, ১১৬, ১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২০ এবং ১২২ নম্বর ওয়ার্ডে গত কয়েক বছরে জনবসতি কয়েক গুণ বেড়েছে। জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে প্রচুর আবাসন। ঘিঞ্জি হয়েছে বসতি। তারাতলা মোড় থেকে শুরু করে নিউ আলিপুরের একাংশ, বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড মোড়, বেহালা ট্রাম ডিপো এলাকার একাংশ, জে কে পাল রোড, সেনহাটি, মহাবীরতলা, রায়বাহাদুর রোড, সিরিটি শ্মশান সংলগ্ন এলাকা, এস এন রায় রোডের একাংশ এবং জেমস লং সরণির খানিকটা অংশ জুড়ে গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতি। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মানুষ পরিষেবা পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে যেমন পরিষেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা মিলছে না। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে কিছু জায়গায়। এখানে আগে জল জমত না। কিন্তু এখন নতুন করে জল
জমছে বেশ কিছু এলাকায়। সব ক’টি ওয়ার্ডে পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। কমিউনিটি হলও সব ওয়ার্ডে তৈরি হয়নি।’’ নিউ আলিপুরের এক দোকানি অজয় কর বললেন, ‘‘১৩ নম্বর বরো জুড়ে এক দিকে যেমন উচ্চবিত্ত মানুষের বাস, অন্য দিকে মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের সংখ্যাও প্রচুর। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে নিকাশির উন্নতি না হলে জল জমার ভোগান্তি আরও বাড়বে।’’

বেহাল নিকাশির কারণেই ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এসএন রায় রোড, শীল ঠাকুরবাড়ি রোড এবং জে কে পাল রোডের কিছু অংশে নতুন করে জল জমছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। শীল ঠাকুরবাড়ি রোডের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সারানোর নামে বার বার তাপ্পি দেওয়ায় গোটা রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়েছে। বাড়িগুলি এখন নিচুতে। তাই জমা জল বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। নর্দমাগুলিও বেহাল। জমা জলে ডেঙ্গির মশা জন্মাচ্ছে।’’ তৃণমূল প্রার্থী কাকলি বাগের দাবি, ‘‘যে যা অভিযোগ করছেন, সব নোট করে নিচ্ছি। কিছু এলাকায় জল জমছে মেট্রোর কাজের খোঁড়াখুঁড়ির জন্য।’’ বেহালা ট্রাম ডিপো সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের আবার অভিযোগ, ঘন বসতিপূর্ণ ওই এলাকায় একটিই মাত্র গণশৌচালয়। সেখানে এতই ভিড় থাকে যে, দোকান বন্ধ করে শৌচালয়ে যেতে হয়। এক চায়ের দোকানির কথায়, ‘‘রাস্তায় পানীয় জলের কলও বেশি নেই। বাধ্য হয়ে জল কিনতে হয়।’’

এই বরোর পরপর তিনটি ওয়ার্ড ১১৮, ১১৭ এবং ১১৬ নম্বরে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে প্রশাসকমণ্ডলীর বিদায়ী সদস্য তারক সিংহ, তাঁর ছেলে অমিত সিংহ এবং মেয়ে কৃষ্ণা সিংহ। ভোট যত এগিয়ে আসছে, বাবা ও ছেলে-মেয়েদের প্রচারের ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। তিন জনেরই দাবি, গত কয়েক বছরে পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখেননি তাঁরা। ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছেছে। জল জমার সমস্যাও কার্যত নেই বললেই চলে। তারকবাবু বলেন, ‘‘ওয়ার্ডে খোলা নর্দমা নেই, মশা নেই। বস্তির উন্নয়নও হয়েছে প্রচুর। স্বাস্থ্য পরিষেবা আগের চেয়ে অনেক ভাল মিলছে। অনেক দেবদারু গাছ লাগিয়েছি।’’ যদিও এলাকার সিপিএম প্রার্থী সুজয় অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘সৌন্দর্যায়ন বলতে শুধু পার্কগুলিতে নীল-সাদা রং হয়েছে। ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সব থেকে বেশি করে মাথাচাড়া দিয়েছে সিন্ডিকেট-রাজ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর জায়গাই নেই।’’

১১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেনহাটি বাজার এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ আবার বললেন, ‘‘ঘরে ঘরে পানীয় জল এসেছে ঠিকই, কিন্তু বেশ কিছু ত্রিফলা বাতিস্তম্ভে মরচে পড়েছে। তাতে আলো আর জ্বলে না।’’ ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর কৃষ্ণা সিংহের আবার দাবি, ‘‘পরিষেবায় খামতি রাখিনি। জল জমার সমস্যা নেই বললেই চলে।’’ এলাকার বিজেপি প্রার্থী স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শুধু মুখেই উন্নয়ন। একটি স্কুলবাড়িতে বোর্ড ঝুলিয়ে ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য কেন্দ্র টিমটিম করে চলছে। সেখানে চিকিৎসক নেই। পার্কগুলিরও বেহাল দশা।’’

পাড় ভরেছে আবর্জনায়, দূষণে জলের রং কালো কেওড়াপুকুর খালের।

১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কৈলাস পণ্ডিত লেন, টি সি রোড এবং মহাবীরতলার বাসিন্দাদের অভিযোগ, খেলার মাঠগুলি বেশির ভাগই পার্ক হয়ে গিয়েছে। আরও অভিযোগ, ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছলেও অনেক জায়গাতেই জলের চাপ খুব কম।

১২০ নম্বর ওয়ার্ড তথা বরোর কোঅর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ প্রচারে গিয়ে দাবি করছেন, পরিষেবায় কোনও খামতি রাখা হবে না। এলাকায় জনসংখ্যা বাড়লেও আগামী ৫০ বছরের কথা ভেবেই নিকাশি ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। যা শুনে এলাকার মানুষের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চাশ নয়, পাঁচ বছরের পরিকল্পনাটা আগে হোক।’’ তাঁদের দাবি, প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, রাস্তায় জল জমা বন্ধ করা, মশার উপদ্রব কমানো এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি হল তৈরির বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন