আগুন লাগলে ভরসা মেয়াদ উত্তীর্ণ যন্ত্রই

যদিও বাইরের করিডরে কোনও অগ্নি-নির্বাপক বা স্প্রিঙ্কলারের দেখা মেলেনি। হলের মালিক পক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, যিনি এসি-র দেখভাল করেন তিনিই অগ্নি-সুরক্ষার সব দায়িত্ব সামলান। তাঁদের দমকলের তরফে সব কাগজপত্র রয়েছে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৪
Share:

ভিতরে নয়, ইন্দিরা সিনেমা হলের বাইরে রাখা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র, যদিও তার মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে(ইনসে়টে)।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেওয়ালে ছোট্ট কাচ ঢাকা বাক্সে লাল বোতাম টিপলেই সোজা খবর পৌঁছে যাবে দমকলে— প্রিয়া সিনেমা হলে আগুন লাগার ঘটনার পরে সোমবার দুপুরে নেতাজি সুভাষ বসু রোডের উপরে মালঞ্চ সিনেমা হলের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে এটুকুই ‘তথ্য’ মিলল সেখানকার কর্মচারীর কাছ থেকে।

Advertisement

কিন্তু তিনি না হয় কাউন্টার সামলান তাই বিস্তারিত জানেন না। হলের ম্যানেজার? ওই কর্মচারী জানালেন, ‘‘ম্যানেজার নেই। এক জন সব জানেন। কিন্তু তিনিও বাইরের কোনও কাজে গিয়েছেন।’’ তা হলে ওই মুহূর্তে কোনও বিপদ ঘটলে বা আগুন লাগলে? উত্তর এল, ‘‘সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। অগ্নি-নির্বাপক থেকে শুরু করে স্প্রিঙ্কলারও রয়েছে!’’ কিন্তু কোথায়? ‘‘প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে। তবে সেখানে ঢোকা যাবে না।’’

যদিও বাইরের করিডরে কোনও অগ্নি-নির্বাপক বা স্প্রিঙ্কলারের দেখা মেলেনি। হলের মালিক পক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, যিনি এসি-র দেখভাল করেন তিনিই অগ্নি-সুরক্ষার সব দায়িত্ব সামলান। তাঁদের দমকলের তরফে সব কাগজপত্র রয়েছে।

Advertisement

এই ছবি শুধু মালঞ্চের নয়। শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউয়ের উপরে মেনকা সিনেমা হলে প্রবেশের পরে নীচের তলায় দু’টি প্রবেশ পথ এবং ব্যালকনিতে পৌঁছনোর দু’টি সিঁড়ি রয়েছে। নীচের তলা থেকে বেরোনোর জন্য বাম দিকে রয়েছে অতিরিক্ত দু’টি দরজা। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে নীচের তলায় তিনটি অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের দেখা মিললেও বাইরের করিডরে কোনও কিছু নেই। বরং তার পরিসর কমে গিয়েছে বেশ কয়েকটি খাবারের স্টলের জন্য। যদিও ম্যানেজার মহীতোষ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘হলের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা দমকলের সুপারিশ মেনে করা হয়েছে।’’

নবীনা সিনেমা হলে ঢোকা- বেরোনোর মূল রাস্তা দু’টি হলেও প্রেক্ষাগৃহের নীচের তলায় সামনে অনেকটা জায়গা খালি। সেখানেই রয়েছে চারটি অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র।

ডায়মন্ড হারবার রোডের অজন্তা সিনেমা হল নতুন করে তৈরি হয়েছে বছর দশেক আগে। একতলার হল বন্ধ করে ভবনটি তিনতলা করা হয়েছে। দোতলায় দু’টি প্রেক্ষাগৃহ। পাশে চওড়া করিডর। কিন্তু নেমে আসার সিঁড়ি দিয়ে এক সঙ্গে দু’জনের বেশি নামা সম্ভব নয়। পিছনের দিকে সরু একটি সিঁড়ি থাকলেও সেখান দিয়ে নামার পরে দরজায় তালা ঝোলানো রয়েছে। কর্মীরা জানালেন, বিপদ হলে সেটি খুলে দেওয়া হয়। হলের ম্যানেজার দেবাশিস দত্ত অবশ্য করিডরে থাকা অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র দেখিয়ে বললেন, ‘‘এগুলি প্রায়শয়ই পরীক্ষা করিয়ে রাখা হয়। জলের পাইপও প্রায় প্রতিদিনই খোলা হয়। আগুন লাগলে পাইপ খুলে জল দিতে পারবেন কর্মীরা।’’ কিন্তু যে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রগুলি তিনি দেখালেন সেগুলির মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০১৫ সালে!

অজন্তা সিনেমা হল থেকে বেরোনোর অপ্রশস্ত সিঁড়ি।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে স্মৃতি বিজড়িত সিনেমা হল— বিজলি, ইন্দিরা। বিজলির একাধিক গেট এবং তার পরিসরও চওড়া। প্রেক্ষাগৃহের বাইরের করিডরে অনেকটা জায়গা। তবে কিন্তু কোথাও কোনও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র চোখে পড়েনি।

ইন্দিরায় অবশ্য দরজা একটাই। পিছনের দিকে নামার সিঁড়ি থাকলেও সেখান থেকে রাস্তায় পৌঁছনোর লোহার গেটটি তালা দেওয়া থাকে। সামনের দিকের মূল গেট শুধু খোলা থাকে। পিছনের গেটের বাইরের গলিতে তিন-তিনটে অগ্নি-নির্বাপক টাঙানো রয়েছে, যাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছর আগে।

হাজরা মোড়ের কাছে বসুশ্রীতে মূল প্রেক্ষাগৃহ দোতলায়। সেখানে পৌঁছনোর সিঁড়ি বেশ চওড়া। নীচেও রয়েছে প্রশস্ত জায়গা। অফিসঘরের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদও রয়েছে আরও এক বছর। কর্মীরা জানালেন প্রেক্ষাগৃহের ভিতরের যন্ত্রগুলির মেয়াদও একই রকম।

অ্যাকাডেমির প্রেক্ষাগৃহে ঢোকা-বেরোনোর একটিই পথ।ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সিনেমা হলগুলির মতোই ঝুঁকির ছবি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের প্রেক্ষাগৃহেও। সেখানে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ ঠিক থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ ও বেরোনোর একটাই পথ। তাও বিশেষ প্রশস্ত নয়, ফলে বিপদ ঘটলে বেরোনোর জন্য হুড়োহুড়িতে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন