যশোর রোডে যানজট। ফাইল চিত্র
উন্নয়ন অপেক্ষায় রইল রাস্তাতেই!
জমি-জটে কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বারাসত-বনগাঁ বাইপাসের কাজ। এ বার আটকে গেল যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজও। সেই প্রকল্পেরই অঙ্গ হিসেবে ওই জাতীয় সড়কের পাঁচটি রেলগেটের উপর দিয়ে যে উড়ালপুলগুলি তৈরির কথা ছিল, তার কাজ বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরেও শেষমেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাপজোক ও দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া। ওই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের বরাদ্দ প্রায় ৫০০ কোটি টাকাও ফেরত যেতে বসেছে।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের দেওয়া ওই টাকার পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন খাতে আরও কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, হকার উচ্ছেদ ও গাছ কাটা নিয়ে আপত্তির জেরে গোটা প্রকল্পই এখন বিশ বাঁও জলে। ওই কাজের দায়িত্বে থাকা পূর্ত ও সড়ক বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (রেলওয়ে ওভারব্রিজ) দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন বাধায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আদৌ কাজ হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
বস্তুত, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণ এবং ঢাকা-কলকাতা বাস পরিষেবা ছাড়াও এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছিল। সেই প্রকল্পে বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া এবং বনগাঁয় মোট পাঁচটি রেলগেটের উপরে পাঁচটি উড়ালপুল তৈরির মাপজোকও শুরু হয়। কিন্তু দেখা যায়, তাতে ১১৮৪টি দোকান উচ্ছেদ এবং ৩০০টির মতো গাছ কাটা পড়বে।
রাস্তার পাশের প্রাচীন গাছগুলি কাটা যাবে না, এই দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয় মানবাধিকার সংগঠন ও গাছপ্রেমীরা। সুপ্রিম কোর্ট গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ জারি করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টির সমাধান চাইলেও রাস্তা সম্প্রসারণের ব্যাপারে সুরাহা হয়নি। এমনকি, পেট্রাপোল থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার অংশে গাছগুলিকে মাঝখানে রেখে রাস্তা সম্প্রসারণ করা যায় কি না, সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা হয়নি।
তবে শুধু গাছ নয়, বছর কয়েক আগে বারাসত-বনগাঁ বাইপাস তৈরির সময়ে যা হয়েছিল, ঠিক সেই ভাবে এ বারও মূলত হকারদের বাধাতেই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ আটকে গেল বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। হকারদের তরফে সব চেয়ে বেশি বাধা এসেছে হাবড়া ও বারাসতে। রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের জমি ও টাকা দেবে বলে জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাতেও অবশ্য বাধা কাটেনি।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবড়ার বিধায়ক জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত উড়ালপুলের জন্য হাবড়ায় ব্যক্তি মালিকানার কিছু দোকান ও বাড়ি ভাঙতে হবে। তাঁরা সেই জমি দিতে চাইছেন না। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, রাজ্য সরকারের দেওয়া বিকল্প জমিতে উড়ালপুল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘এ সব কোনও কারণ নয়। আসলে কেন্দ্র কোনও কাজই করবে না। সে জন্যই উড়ালপুলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আর করবেও না।’’
দোষারোপের ডামাডোলে কাজ আটকে যশোর রোডে যানজটের যন্ত্রণা রয়েই গেল, বলছেন এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ।