তখন চলছে কাচ ভাঙার চেষ্টা।
দমদম যাব বলে কালীঘাট থেকে মেট্রোয় উঠেছিলাম। কিন্তু সেই যাত্রা যে এমন মারাত্মক হবে, তা কে জানত! হাসপাতালে বসে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, বেঁচে আছি!
তখন পৌনে পাঁচটা বাজে। কালীঘাট থেকে একদম প্রথম কামরায় উঠেছিলাম। ভীষণ তাড়া ছিল। তাই বার বার ঘড়ির দিকেতাকাচ্ছিলাম। রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। ঘড়ি দেখলাম, চারটে ছাপান্ন। রবীন্দ্র সদন স্টেশন সবে ছেড়েছে। ও বাবা, কী বীভৎস আওয়াজ!কান প্রায় ঝালাপালা। হঠাৎ করেই প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল মেট্রো।কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব অন্ধকার। টিম টিম করে কামরায় জ্বলছে এমারজেন্সি আলো। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রবল একটা চাপ অনুভব করছি শরীরে। আর ঠিক সেই সময়েই বাইরে চোখ গেল। লাইনের দু’পাশে আগুনের শিখা! কাচের জানলার বাইরে থেকে সেই আগুনের আভা যেন এসে পৌঁছচ্ছে কামরার ভেতরেও। ভেতরের রং তখন লাল!
মুহূর্তের মধ্যেই গোটা কামরা ভরে গেল ধোঁয়ায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ জ্বালা করছে। কামরা জুড়ে প্রবল চিৎকার। তারমধ্যেই কেউ কেউ এসি কামরার জানলার কাচ ভাঙার চেষ্টা শুরু করলেন। আমিও সামিল হলাম তাতে। কিন্তু, কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছিল না। কাচ ভাঙার জন্য তো আমাদের কাছে কিছু নেই। কাজ করছিল না আগুন নেভানোর যন্ত্রও।অনেক বাচ্চা রয়েছে কামরায়। তাদের কান্নাকাটি দেখেও কিচ্ছু করতে পারছিলাম না আমরা। একটা অসহায় পরিস্থিতি। কেউ কেউ ফোন করার চেষ্টা করলেন হেল্পলাইনে। যে যার মতো করে বাঁচার একটা চেষ্টা। কিন্তু, আমাদের অবস্থা অনেকটা জতুগৃহে বন্দি হয়ে থাকার মতো।
আরও পড়ুন: মেট্রোয় আগুন, ধোঁয়ায় দমবন্ধ কামরায় আটক যাত্রীরা, অসুস্থ ৬
সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে আসার পর।
এ ভাবেই কাটল টানা মিনিট কুড়ি। একদল যাত্রী তখনও দরজা-জানলায় এক নাগাড়ে লাথি, ঘুষি মেরে যাচ্ছিলেন। শুনতে পাচ্ছিলাম, এক...দুই...তিন...চার...তার পরেই সকলে মিলে জোর ধাক্কা। কিন্তু, কিছুতেই ভাঙছে না কাচ। হঠাৎ করেই এক জনের লাথিতে ভাঙল জানলার কাচ। জানলা ভাঙা পেয়েই অনেকে সেখান দিয়ে নীচে সুড়ঙ্গের মধ্যে ঝাঁপ দিতে থাকেন। ধুপ ধাপ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম ওই চিৎকারের মধ্যে।
আরও পড়ুন: মেট্রোর কামরার সেই মুহূর্ত, দেখুন ভিডিয়ো
আমিও লাফ মারলাম। মনে হচ্ছিল, কামরায় আটকে থাকার চেয়ে বাইরে লাফ মেরে বেরিয়ে গেলেই বেঁচে যাব। প্ল্যাটফর্মে উঠে দেখি, তখন সবে পুলিশ ও দমকল পৌঁছেছে। কোনও রকমে শুয়ে পড়লাম প্ল্যাটফর্মে। কেউ এক জন ছুটে এসে জল ঢেলে দিলেন মুখে-চোখে। তখনও ভাবিনি বেঁচে যাব!
(শহরের প্রতি মুহূর্তের হেডলাইন, কলকাতার যে কোনও ব্রেকিং নিউজ পেতে ক্লিক করুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)