আইন ‘লঙ্ঘিত’ আইন রক্ষকের ফেসবুক পেজে

কলকাতা পুলিশের ওই পেজে কসবা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত-সহ সহকারী নাবালকের নাম প্রকাশ করেছে। প্রকাশ করা হয়েছে তার পরিচয়ও!

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০২:৪০
Share:

কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে সেই পোস্ট।

কলকাতা পুলিশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেই লঙ্ঘন করা হল জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট-এর ৭৪ নম্বর ধারা— এমনই অভিযোগ জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবীদের একাংশের।

Advertisement

অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের ওই পেজে কসবা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত-সহ সহকারী নাবালকের নাম প্রকাশ করেছে। প্রকাশ করা হয়েছে তার পরিচয়ও!

যদিও যুগ্ম কমিশমনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘নাবালক-নাবালিকার ছবি প্রকাশ করা যায় না। নাম তো আমরা আগেও দিয়েছি!’’ পরে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘আইনে যদি নাম না দেওয়ার কথা বলা থাকে তা হলে ওই পোস্টটা তুলে নেব।’’ রাতে ওই পোস্ট থেকে নাবালকের নাম সরিয়েও নেওয়া হয়।

Advertisement

কী লেখা হয়েছিল ওই পেজে?

কসবায় সম্প্রতি খুন হওয়া এক মহিলার দেহ উদ্ধারের পর থেকে কী অবস্থায় তাঁকে পাওয়া গিয়েছে, কী ভাবে মারা হয়েছে তার বিবরণের পাশাপাশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। আর তার সঙ্গেই উঠে এসেছে মূল অভিযুক্তের নাম এবং শীলাদেবীকে খুনের ‘মোটিভ’। আর সেখানে আট নম্বর প্যারাগ্রাফে লেখা হয়েছে— ম্যারাথন জেরায় অবশেষে সূত্র মিলল। বিস্তারিত উহ্য থাক আপাতত। এটুকুই বলা যাক, এক জনের বয়ান ও আচরণে অসঙ্গতি ধরা পড়ল যথেষ্ট। ফ্ল্যাটের সাফাইকর্মী শম্ভু কয়াল। বয়স মাত্র ১৯। শুরুতে নানাভাবে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করলেও জেরার মুখে শেষমেশ সে কবুল করল অপরাধ। জানাল, সে এবং তার সঙ্গী ... (এখানে নাবালকের নাম লেখা হয়েছে) মিলে শীলাদেবীকে খুন করেছে। উদ্দেশ্য শীলাদেবীর টাকা-গয়না হাতানোই। ...কেও (নাবালকের নাম) ধরা হল।

এখানেই শেষ নয়। দশম প্যারাগ্রাফেও চতুর্থ লাইনেও ফের বলা হয়েছে ওই নাবালকের নাম। এটাও বলা হয়েছে আদতে সে নাবালক। তার মা কয়েক দিন আগে শীলাদেবীর ফ্ল্যাটে পরিচারিকা ছিলেন। একই ভাবে একাদশ প্যারাগ্রাফেও কী করে ওই নাবালক মূল অভিযুক্ত শম্ভুকে সাহায্য করেছে তা নাবালকের নাম-সহ লেখা হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞেরা। সম্প্রতি রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের শিশুকল্যাণ সমিতি গঠনের কাজে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞও হতবাক পুলিশের এই লেখায়।

রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন-এর চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত বা নির্যাতিত নাবালক-নাবালিকার নাম, পরিচয়, ছবি কোনও কিছুই প্রকাশ করা যায় না। কলকাতা পুলিশ এটা কী করে করল জানি না। হয়তো ওদের মধ্যে এখনও আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই।’’

হাইকোর্টের আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে অভিযুক্ত নাবালকের নাম এবং তার পরিবারের যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে তা অনুচিত হয়েছে বলেই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন)-এর ৭৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে পুলিশ। ৭৪ নম্বর ধারায় (১) বলা হয়েছে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কোনও নাবালক-নাবালিকার তথ্য, নাম বা পরিচয় শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যম, অডিও ভিসুয়্যাল মিডিয়া কিংবা অন্য রকমের কমিউনেকশনে প্রকাশ করা বেআইনি নয়। পুলিশও কোনও তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না।’’ পরিচয় বা নাম প্রকাশ করলে ছ’মাসের জেল কিংবা সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন