সামনে বড় পুজো, ঘর ছেড়ে তাই রিসর্ট-যাপন

ভিআইপি রোড সচল রইল। কিন্তু তার জেরে পুজোর ক’দিন লেক টাউন, বাঙুর এবং দমদম পার্কে জনজীবন কার্যত অচল হল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

ভোগান্তি: পুজোর আগে থেকে এ ভাবেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল ভিআইপি রোডের একাংশ। ফাইল চিত্র

ভিআইপি রোড সচল রইল। কিন্তু তার জেরে পুজোর ক’দিন লেক টাউন, বাঙুর এবং দমদম পার্কে জনজীবন কার্যত অচল হল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের বক্তব্য, পুজোর সময়ে নিজেদের এলাকায় চলাফেরার ক্ষেত্রে রীতিমতো ভোগান্তি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁদের অসুবিধে কোনও গুরুত্বই পায়নি।

Advertisement

এই ভোগান্তির নমুনা হিসেবে লেক টাউনের বাসিন্দা একটি পরিবারের কথা ঘুরছে এলাকার লোকেদের মুখে মুখে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, লেক টাউন ঘড়ি-মোড়ের কাছে ওই ব্যক্তির বাড়ি। মহালয়ার আগে শ্রীভূমির পুজোর উদ্বোধন হওয়ায় তৃতীয়া থেকেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় জমতে শুরু করে। চতুর্থী-পঞ্চমীতে তা জনস্রোতের আকার নেয়। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ঘোষণামতো ভিআইপি রোড সচল রাখতে লেক টাউন ঘড়ি-মোড়ের কাট আউট বন্ধ করে দেয় বিধাননগর পুলিশ। ওই বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাড়ির সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় এবং ট্র্যাফিক বিধির ফাঁসে নিজের বাড়িতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ওই বাসিন্দা। প্রয়োজনেও বেরোনোর কোনও উপায় ছিল না।’’ এর পরে আর পুজোর ক’দিন নিজের ঘরে থাকার ঝুঁকি নেননি বাড়ির কর্তা। সপরিবার রাজারহাটের একটি রিসর্টে চার দিন কাটাতে বাধ্য হন তিনি! এর প্রেক্ষিতে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, এক বারে প্রচুর দর্শককে শ্রীভূমির পুজো দেখার সুযোগ করে দেওয়া গেলে ভাল হত। কিন্তু মণ্ডপের সঙ্কীর্ণ রাস্তায় তার সুযোগ ছিল না। সে ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং ভিআইপি রোডের মসৃণতাই অগ্রাধিকার পেয়েছে।

পুজোর ক’দিন দুর্ভোগের শিকার দমদম পার্কের বাসিন্দারাও। গত বছর পুজোর সময়ে ভিআইপি রোড স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেই রাস্তা সচল রাখাই ছিল কমিশনারেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ। মহালয়ার আগে থেকে রাস্তায় নেমে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ যে ভাবে কাজ করেছে, তার প্রশংসাই করেছেন পুজো মণ্ডপের দর্শনার্থীরা। কিন্তু অনুযোগের সুর বাসিন্দাদের গলায়। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দমদম পার্কে প্রায় প্রতিটি পুজোর জন্য কোনও না কোনও রাস্তা বন্ধ করা ছিল। ভিআইপি থেকে দমদম পার্কের রাস্তায় গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। হয় বাঙুর যশোর রোড থেকে শ্যামনগর রোড ধরে দমদম পার্ক বাজারের রাস্তা ধরতে হবে, নয় তো কেষ্টপুর থেকে প্রফুল্লকানন ধরে দমদম পার্ক বাজারের রাস্তা ধরতে হবে।

Advertisement

এর মধ্যে আবার প্রফুল্লকাননের একটি পুজোর ভিড়ের জেরে সেই পথও মাঝেমধ্যেই আটকে পড়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ভিআইপি রোড মসৃণ রাখার পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারা কী ভাবে যাতায়াত করবেন, সেটাও তো দেখা পুলিশের কর্তব্য! এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে দমদম পার্কের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বলতে বাজারের ওই রাস্তা। সেটাও এতই সঙ্কীর্ণ যে গাড়ির চাপে সব সময়ে যানজট জর্জরিত থেকেছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যে কী হত!’’

বস্তুত, বাসিন্দাদের ক্ষোভ আঁচ করে পুজোর মধ্যে যানশাসন পরিকল্পনায় কিছু বদলও আনে পুলিশ। তার মধ্যে অন্যতম পূর্ত দফতরের পরামর্শ মতো লেক টাউন ফুটব্রিজ বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘিরে বাসিন্দাদের অসন্তোষ। ওই ফুটব্রিজ বন্ধ থাকায় সল্টলেক অথবা ভিআইপি-র কলকাতামুখী রাস্তা থেকে গোলাঘাটার ভূগর্ভস্থ পথ ধরে দীর্ঘ ঘুরপথে বাড়ি ফিরতে হয়েছে লেক টাউনের বাসিন্দাদের। যার জেরে ক্ষোভের মাত্রা বাড়লে লেক টাউন ট্র্যাফিক গার্ড থেকে বাসিন্দাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশ অটো ও বাস পরিষেবা চালু করে। দমদম পার্কের মোড়ে রাস্তা পারাপার বন্ধের সিদ্ধান্তও শিথিল করা হয়। পাশাপাশি, কেষ্টপুর ভূগর্ভস্থ পথের কাছে নতুন একটি কাট আউট করা হয়। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভিড়ের কাছে এই ব্যবস্থা নিতান্তই সামান্য। এ দিকে কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ফুটব্রিজ নিয়ে পূর্ত দফতরকে চিঠি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের বক্তব্য, হয় ফুটব্রিজ শক্তপোক্ত করুন, নয় সরিয়ে ফেলুন। ফুটব্রিজ কেন বন্ধ, তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে গিয়ে পুলিশকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’’

কিন্তু আসছে বছরও দুর্ভোগের ধারা কি অব্যাহত থাকবে?

বিধাননগর কমিশনারেটের ওই কর্তার কথায়, ‘‘দমদম পার্কে প্রস্তাবিত ভূগর্ভস্থ পথ তৈরি হলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। আগামী বছর পুজোর আগে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা। এ ছাড়া দমদম পার্ক এবং বাঙুরের মধ্যে একটি নতুন সংযোগকারী রাস্তা তৈরির প্রয়োজন। ওখানে নয়ানজুলি রয়েছে। সব দিক মাথায় রেখে বিকল্প রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন