বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু দেহ সৎকার করতে অস্বীকার করেছেন মেয়ে, অভিযোগ এমনটাই। ফলে দেহ পড়ে আছে সরকারি হাসপাতালের মর্গে। গৌতম দত্ত (৭০) নামে পেশায় আইনজীবী ওই বৃদ্ধ সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ বাঙুর হাসপাতালে মারা যান। তিনি থাকতেন ভবানীপুর এলাকার পদ্মপুকুরে।
গৌতমবাবু আলিপুর আদালতে ওকালতি করতেন। সেখানকার আইনজীবীরা জানান, গৌতমবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর একমাত্র মেয়েকে খবর পাঠানো হয়। কিন্তু মেয়ে দেহ সৎকার করতে রাজি হননি। শুধু তা-ই নয়, বাবার সহকর্মীদের হাতেও দেহ তুলে দিতে নারাজ তিনি। তাই আপাতত আইনি জটিলতায় আটকে বাঙুরের মর্গেই সৎকারের অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে ওই বৃদ্ধের দেহ।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে গৌতমবাবু যতীন দাস রোডে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়েরা এক আইনজীবীর বাড়িতে নিয়ে যান তাঁকে। অসীম ঘোষাল নামে ওই আইনজীবী বলেন, ‘‘লালবাজার ও লেক থানায় বিষয়টি জানাই। তার পরে গৌতমবাবুর সহযোগী গুরুপদ চট্টোপাধ্যায়কে খবর পাঠাই। গুরুপদবাবু ও লেক থানার পুলিশ গৌতমবাবুকে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করেন।’’ ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘গৌতমবাবুকে বিষাক্ত পোকা কামড়েছিল। তা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তা ছাড়া, বার্ধক্যজনিত আরও কিছু জটিল সমস্যা ছিল। শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গৌতমবাবুর মৃত্যু হয়।’’
আলিপুরের আইনজীবী তথা কাউন্সিলর বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনজীবীরা মিলেই দেহ সৎকারে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু মেয়ে অনুমতি না দেওয়ায় আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’’ মঙ্গলবার আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বৈঠকও ডাকা হয়। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ইন্দ্রনীল বসু বলেন, ‘‘আমরা গৌতমবাবুর মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ওঁরা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন না।’’ কী সহযোগিতা আশা করছেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা? ইন্দ্রনীলবাবুর কথায়, ‘‘শুধু একটি কাগজে লিখে দিতে হবে, গৌতমবাবুর মৃতদেহ বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের হাতে তুলে দিলে ওঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু ওঁরা তাতেও রাজি হচ্ছেন না।’’ গৌতমবাবুর পরিচিত আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, পারিবারিক কিছু সমস্যা রয়েছে। একমাত্র মেয়ের সঙ্গে গৌতমবাবুর বনিবনা ছিল না। সেই কারণেই হয়তো মান-অভিমানের বিষয় রয়েছে।’’ কিন্তু অতি পরিচিত এক বর্ষীয়ান আইনজীবীর দেহ বেওয়ারিশ হিসেবে পুরসভার হাতে তুলে দিতেও পারছেন না গৌতমবাবুর সহকর্মীরা। লেক থানার তরফেও একাধিক বার মৃতের মেয়ে ও জামাইকে তলব করা হয়েছে। কিন্তু তারাও কোনও সহযোগিতা পায়নি বলে পুলিশের দাবি।
আলিপুরের আইজীবীদের একাংশের কথায়, আইনত রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলে দেহ দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে মেয়ে ছাড়া গৌতমবাবুর কোনও নিকটাত্মীয় নেই। বৈশ্বানরবাবুর কথায়, ‘‘ফের আলোচনায় বসব। দেহ আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আলিপুর আদালতে আবেদন করব। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যা করার করতে হবে।’’ তবে এ দিন রাতে গৌতমবাবুর জামাই সাত্যকি সজ্জন স্ত্রীকে বোঝানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী কলকাতার বাইরে রয়েছেন। তাড়াতাড়ি ফিরবেন। আমি কথা বলে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করছি।’’